শাবিপ্রবিতে শোক দিবসের র্যালিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের উপস্থিতি মাত্র ৫ শতাংশ
15, August, 2022, 8:40:56:PM
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(শাবিপ্রবি) প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস র্যালিতে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এতে শিক্ষক ৪৩৭ জনের মধ্যে পুস্পস্তবক অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন ৪৮ জন। তবে র্যালিতে দেখা যায় ২৭ জনকে। কর্মকর্তা ২৬৮ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৫ জন। তবে র্যালিতে দেখা যায় মাত্র ৬জনকে।
সোমবার(১৫ আগস্ট) পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল সাড়ে নয়টায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রশাসন ভবন থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপুর্ণ ভবন প্রদক্ষিণ করে পুণরায় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় দেখা যায় র্যালিটিতে বেশিরভাগ জুড়েই বিএনসিসির উপস্থিতি থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দেখা যায় নি। ছিল না শিক্ষক নেতাদের একাংশ। এর আগে গতকাল রবিবার এক অফিস আদেশে সকল দপ্তর, ৩টি ইনস্টিটিউট, ২৮ টি বিভাগ, ৫টি আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতিকে অবগত করা হলেও উপস্থিতি দেখা যায়নি দপ্তর প্রধান, বিভাগীয় প্রধান এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত কাজে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বর্তমানে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন। তাই তাঁর স্থালাবিশিক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন করছেন কোষাধ্যক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রতিবছর উপাচার্য অনুষ্ঠানে থাকায় প্রায় সকল শিক্ষক উপস্থিত থাকতেন। উপস্থিত থাকতেন শিক্ষক প্যানেলের নেতারাও। তবে এবার একটি গ্রুপকে নিষ্কৃয় দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি জাতীয় শোক দিবস পালন করে থাকে আওয়ামী সমর্থিত দু’টি শিক্ষক প্যানেল। প্রতিবছর যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় শোকদিবস পালন করে থাকেন উভয় প্যানেলের শিক্ষকেরা। কিন্তু এ বছর জাতীয় শোকদিবসের শোকর্যালি ও শোকসভায় শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চা ঐক্যবদ্ধ’ শিক্ষকবৃন্দ প্যানেলের শিক্ষকদের সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেলেও আওয়ামী সমর্থিত অপর একটি শিক্ষক প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ’ শিক্ষকদের অধিকাংশই ছিল অনুপস্থিত। শোকর্যালিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের(বিএনসিসি) দখলে। ঠিক একই রকম দৃশ্য দেখা যায় শোকসভাতেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসন রাজা মিলনায়তনে (মিনি অডিটরিয়াম) আয়োজিত শোকসভাতে শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবর্তে ছিল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।
এক বিবৃতিতে জোটের পক্ষ থেকে তাঁরা জানায়, আজ রাত ১২.০১ মিনিটে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শাবিপ্রবি এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে `৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে নির্মমভাবে শত্রুর গুলিতে নিহত হওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে বঙ্গবন্ধুর মুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর মুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এসময় রাতে জোট এবং সংগঠনগুলোর অর্পিত ফুল সরিয়ে রাখা হয়। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং এই ঘটনা শোক দিবসের গাম্ভীর্যকে নষ্ট করেছে৷ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছ থেকে এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়, যা শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উক্ত ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে এবং প্রশাসনের কাছ থেকে এর যথোপযুক্ত ব্যাখ্যা দাবি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শোকদিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও প্রার্থনা সভা। এতে সকাল ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে যথারীতি কালোপতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯.১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে উপাচার্যের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সকাল ১০টায় মিনি অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্কুল অব ফিজিক্যাল সায়ন্সেসের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হাওলাদার, কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে মৃন্ময় দাস ঝুটন, কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক শাখার নেতাকর্মীরা। সভা সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। সভা শেষে বাদজোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।