শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
12, August, 2022, 5:21:2:PM
মোছা. জান্নাতী বেগম:
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত কবি নজরুলের স্মৃতিতে ঘেরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৫ অতিবাহিত করে ১৬ বছরে পদার্পণ করছে। এটি ২০০৬ সালের ৯ মে প্রতিষ্ঠিত হয়; যদিও এটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কয়েক বছর আগে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলত বাংলাদেশের প্রথম সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় আইন এটিকে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
১৫ একর জমি নিয়ে শুরু করে বর্তমানে ৫৭ একর জমিতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা অনুযায়ী এই পরিমাণ আয়তন বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই বর্তমান উপাচার্য সৌমিত্র শেখর জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটা একটি ইতিবাচক চিন্তা। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীন ২৪টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে মোট ৪টি হল। ছেলেদের ২টি অগ্নিবীণা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং মেয়েদের দুটি হল দোলনচাঁপা ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এর মধ্যে দোলনচাঁপা ও অগ্নিবীণা হল দুটির নামকরণ করা হয়েছে কবি নজরুলের গ্রন্থের নামানুসারে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ ও নজরুলের গ্রন্থের নামানুসারে করা হয়েছে। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাফেটেরিয়ার নাম চক্রবাক, মেডিকেল সেন্টার ব্যথার দান। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে, যেমন:- ধুমকেতু, প্রলয়শিখা যেগুলো নজরুলের গ্রন্থের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবকাঠামোগত এবং সার্বিক উন্নয়ন খুব একটা লক্ষ্য করা না গেলেও ২০২১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। এর পূর্বে ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১৩ই নভেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উপাচার্য সৌমিত্র শেখর যোগদানের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ অসংখ্য কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।
নতুন নির্মিত দুটো হল চালু: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে ২০২২ সালের পূর্ব পর্যন্ত দুটি হল, একটি ছাত্র হল অগ্নিবীণা এবং একটি ছাত্রী হল দোলনচাঁপা চলমান ছিলো। পাশাপাশি নতুন দুটি হল নির্মাণ কাজ শেষের দিকে থাকলেও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের পূর্ব পর্যন্ত হল দুটি চালু করা হয়নি। ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ছাত্রী মেসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নতুন উপাচার্য মাত্র ২১ দিনের মধ্যে নতুন নির্মিত দুটো হল চালু করে দেন।
স্পিডব্যকার নির্মাণ: শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করেন, যে কারণে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষক সহ সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন।
সীমানা প্রাচীর নির্মাণ: চলতি বছরের ৩১শে মার্চ উপাচার্য প্রফেসর ড.সৌমিত্র শেখর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন সংশোধিত শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজটি অগ্রসর হচ্ছে।
ক্রিয়াশীল সংগঠনের সাথে মতবিনিময়: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়টি ক্রিয়াশীল সংগঠন রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত এবং এসব সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তারা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিতর্ক, কমিউনিকেশন, লেখালেখি সহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।
প্রথম আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে গত ১৪ ও ১৫ জুন দু`দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যাতে ২৬০ টি এবস্ট্রাক্ট জমা পড়েছিলো। এ সেমিনারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিত লাভ করতে শুরু করেছে। উপাচার্য বলেন, এখন থেকে প্রতি বছরই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন ৭টি ভবনের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্ধোধন: ১৭তম নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির আগমন ঘটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই দিন ই মোট ৭টি ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণ করা হয়।
সেশনজট নিমূর্লে পদক্ষেপ: অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কিভাবে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ অবহ্যত রাখা যায় এবং কিভাবে তা আরো বৃদ্ধি করা যায় সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপও হাতে নিয়েছেন এবং একই সাথে কিভাবে সেশনজট দূর করা যায় তার জন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন।
মোছা. জান্নাতী বেগম শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ