স্বাধীন বাংলা ডেস্ক শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
ভুয়া অভিযোগ তুলে, মৌলবাদী গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে উদীচী। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানায় সংগঠনটি।
শুক্রবার রাতে উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
দুপুরে একদল মুসল্লি জুমার নামাজের পর রাজধানীর উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরে ৬এ রোডে ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলা চালায়।
উদীচীর বিবৃতিতে বলা হয়, বাসার গেটের সামনে ভ্যানে সবজির দোকান বসানো এবং গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে যে বচসার শুরু, তা থেকে রতন সিদ্দিকীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছাড়াও তার স্ত্রী, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সদস্য নাট্যকর্মী, শিক্ষক ফাহমিদা হক কলিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা এবং অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসার দারোয়ান, গাড়িচালককেও মারধর করেছে একদল দুর্বৃত্ত।
নামাজের সময় বাধা সৃষ্টি করার ভুয়া অভিযোগ তুলে এসব তাণ্ডব চালিয়েছে একদল মৌলবাদী বলেও বিবৃতিতে জানায় উদীচী।
বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচী এ ধরনের জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এ ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িত সবার দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। এ ছাড়া, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী এবং তার পরিবারের সদস্যদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানাচ্ছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা হলে সব প্রগতিশীল মানুষকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় উদীচী।
সিপিবির নিন্দা
অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী ও তার সহধর্মিণী ফাহমিদা হক কলির উপর হামলায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে সিপিবি।
সিপিবি ঢাকা নগর উত্তর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির সভাপতি ডা. সাজেদুল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক লুনা নুর বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানান।
হামলাকে উগ্র সাম্প্রদায়িক বলে দাবি করে বিবৃতিতে নেতারা বলেন, `ড. রতন সিদ্দিকীর উপর এ হামলা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধিচর্চা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উপর হামলা! অনতিবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থার জোর দাবি জানাই।`
যেভাবে হামলা
রতন সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বিকেলে বলেন, ‘‘আজকে দুপুরের সময় এক দল মুসল্লি ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে আমার বাসায় হামলা করে। তারা আমার কলাপসিবল গেইট ভাঙার চেষ্টা করে। এক ঘণ্টা চলার পর পুলিশ-র্যাব এসে তাদেরকে সরিয়ে দেয়। প্রায় শ দুয়েক লোক ছিল।’
কেন হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে একজন এসে বলেছে, আমি নাকি বলেছি, এখানে ধর্মের নামে ভণ্ডামি হয়। অথচ আমি কিছুই বলিনি। আমার বাসার সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল, সেটি সরানোর জন্য ড্রাইভার হর্ন দেয়। একজন মসজিদ থেকে এসে বলেছে, নামাজের সময় কেনো হর্ন দিল। এরপরই আরেকজন এসে বলে, আমি নাাকি ধর্মের বিরুদ্ধে বলি। এই বলে হামলা করে।’
রতন সিদ্দিকীর মেয়ে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী তার বাবা ও তাদের বাসায় হামলার অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজকে জুম্মার পর আমাদের গেটের সামনে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়, আমার বাবাকে ঘুষি দেয়, ধাক্কা দেয়, নাস্তিক মালাউন হিন্দু বলে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়, আমার আম্মুকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়, আমাদের ড্রাইভার এবং দারোয়ানের উপর হামলা করে।’
এই হামলার নেপথ্যে বাসার গেটের সামনে ভ্যানে করে বাজার বসানোকে বাধা দেয়াকে কারণ বলে জানান।
লেখেন, ‘আমাদের গেটের সামনে ভ্যান দিয়ে বাজার বসে আর শুক্রবার আমাদের রাস্তা পুরোটা ব্লক করে রাখে। আমাদের গাড়ি ঢোকার জন্য দুইবার হর্ন দেয়ার সাথে সাথে একজন এসে বলল গাড়ি ঢুকতে দিবে না। গাড়িতে আম্মু-বাবা ছিল, একটা বাইক গেটের সামনে। সরানোর জন্য বলল। মুহূর্তেই বলল নামাজের সময় গাড়ি ঢুকবে না।
‘বাবা গাড়ি থেকে নামার পর পর আম্মুকে আর বাবাকে মালাউন হিন্দু নাস্তিক বলে গালাগাল করে। একপর্যায়ে বলে এই বাড়িতে নাস্তিক থাকে, এরা ইসলাম অবমাননা করেছে। বলেই নারায়ে তাকবির বলে হামলা শুরু করে।’
হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া এটি মৌলবাদীদের কাজ বলেও দাবি করেন। লেখেন, ‘আমার বাবার উপর আজকে এই সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী কারা? বাবার রাজনৈতিক আদর্শ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, মৌলবাদের প্রতি সোচ্চার হওয়া, কুকুর খাওয়ানো, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কথা এগুলো অপরাধ?’
এ ছাড়া ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাসার সামনে পুলিশ ও র্যাব উপস্থিত হয় বলে জানান তিনি।
|