জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষারের ব্যক্তিগত গাড়িচালককে মারধরের ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হল।’
বিজ্ঞপ্ততিতে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতর কোনো কারণ বর্ণনা করা হয়নি। এ বিষয়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানায়, রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ি চালককে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোকজনই মারধর করেছে। তাই আপাতত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
গত রবিবার ওয়ারিতে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে কৌশিক সরকার সাম্য নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ি চালককে মারধর করে। সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারী থানায় অভিযুক্তসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মীদের দিয়ে চাঁদাবাজির করার ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজ বের হওয়ার ঘটনাও সামনে আসছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সহ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘ইব্রাহীম ও আকতারকে সভাপতি সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় লুকিয়ে তারা বেপরোয়া ভাবে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিসি টিভির ফোটেজ তো সবার কাছেই আছে।’
সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সভাপতির কর্মী সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মো. মাসুদ রানা প্রতি মাসে চাঁদা দেয়ার রফাদফা করতে মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে হুমকি ধামকির পর বের হয়ে আসে।
এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নারী হেনস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে থাপ্পড় মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ সত্য প্রতীয়মান হওয়ায় একই শিক্ষাবর্ষের ও ওই বিভাগেরই দুই শিক্ষার্থী মো. খায়রুল ইসলাম ও মফিজুল্লাতে (রনি) সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী। গত ১৯ জুন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান একই বিভাগের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসন এবং ওই ছাত্রীকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে ঘটনাটির রফাদফা করা হয়।
তিন বছর পর গত ২ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য ইব্রাহিম ফরাজীকে সভাপতি এবং আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অভিযুক্ত কৌশিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের গ্রুপের কর্মী বলে পরিচিত।
কৌশিক ফেসবুক বায়োডাটায়ও নিজেকে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুক ওয়ালে সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে তার ছবি ছাড়াও নিয়মিত ছাত্রলীগ-কেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।
এর আগেও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘প্রেমঘটিত’ কারণে মারামারির জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।