‘আকাশে আষাঢ় এলো; বাংলাদেশ বর্ষায় বিহ্বল মেঘবর্ণ মেঘনার তীরে তীরে নারকেল সারি বৃষ্টিতে ধূমল...’
বুদ্ধদেব বসুর এই কবিতার লাবণ্যস্নিগ্ধ এক বর্ষাকালের দৃশ্যপটের ভেতর যেন জ্যৈষ্ঠের মধুময় দিনলিপির সমাপন হয়েছে। বাংলাদেশ পা রাখল বর্ষার বৃষ্টিধূমল চৌকাঠে। পঞ্জিকার অনুশাসনে আজ বুধবার আষাঢ়ের পয়লা দিন। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের রুদ্র দহন ছিন্ন করতে এলো বর্ষার কাল। যদিও দেশে মৌসুমি হাওয়া আগাম প্রবেশ করায় বৃষ্টি হচ্ছে কিছুদিন ধরে। রয়েছে তাপপ্রবাহেরও পূর্বাভাস।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায়, আষাঢ়ের প্রথম দিবসটি প্রাণ পেয়েছে এভাবে :‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/ আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে/ এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/ পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/ নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে...।’ আষাঢ়ে ঘনকালো মেঘরাশি আকাশ ছেয়ে রাখে। কখনো-বা প্রকৃতিতে নামে তুমুল বারিধারা। তৃষ্ণাকাতর জগত্সংসার এ বর্ষায় ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। পুরো প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে। বৃষ্টির শব্দে বাঙালির হৃদয় এক অজানা বিরহে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’—এই বর্ষার অঙ্গশোভা। কেতকীর মনমাতানো সুবাস, জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনিগন্ধা, দোলনচাঁপা আর কদমফুলের চোখ জুড়ানো শোভা অনুষঙ্গ হয়ে আছে আষাঢ়ের। টইটম্বুর খাল-বিল-পুকুরে ফুটবে বাহারি পদ্ম। দাবদাহে চৌচির মাঠঘাট, খাল-বিল জেগে ওঠে নবীন প্রাণের ছন্দে।
আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। বর্ষা মানবমনে বিচিত্র অনুভূতির জন্ম দিলেও হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ ও দুর্বিপাক বয়ে আনে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন বর্ষা আর গ্রীষ্মকে আলাদা করে চিহ্নিত করাও দিনে দিনে দুরূহ হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মৌসুমি বায়ুর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই আষাঢ়ে ঝরোঝরো বৃষ্টির বদলে দেশের কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এখন দেশের দুই জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা চলবে। তবে সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহারের দক্ষিণাংশ থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণও হতে পারে।