মানিকগঞ্জের মরিচ যাচ্ছে বিদেশে: বছরে আয় ৪০ কোটি টাকা
8, June, 2022, 5:03:5:PM
মোঃ আল মামুন:
কাঁচা মরিচ চাষে খ্যাতি অর্জন করেছে মানিকগঞ্জ। েেলার প্রায় সবক’টি উপজেলায় এই মরিচের আবাদ হয়ে থাকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে মানিকগঞ্জের কাঁচা মরিচ রপ্তানি করে সুনাম অর্জন করেছে। মরিচ বিদেশের মাটিতে রপ্তানি হওয়াতে আবাদ অনেকাংশে বেড়েছে এই অঞ্চলে।
আবহাওয়া ও অনুকূল পরিবেশ হওয়াতে জেলায় প্রতি বছরই মরিচের ফলন ভালো হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, কুয়েত ও সৌদি আরবে রফতানি হচ্ছে মানিকগঞ্জের মরিচ। মরিচের মূল্য ও চাহিদা নির্ভর করে বিমানের উপর। কারণ সঠিক সময়ে বিমানের কার্গো বুকিং এবং ফ্লাইট বিপর্যয়ে এই মরিচের বাজার দর উঠা-নামা করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলা ৭০ হেক্টর, সিংগাইর ৬৫ হেক্টর, সাটুরিয়া ৪০ হেক্টর, ঘিওর ৩০০ হেক্টর, দৌলতপুর ৫৫ হেক্টর, শিবালয় ১২০০ হেক্টর ও হরিরামপুরে ১২৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। সদর উপজেলা ৯০ হেক্টর, সিংগাইর ৮০ হেক্টর, সাটুরিয়া ৪৭ হেক্টর, ঘিওর ৩৩০ হেক্টর, দৌলতপুর ৫৩ হেক্টর, শিবালয় ১০২৬ হেক্টর ও হরিরামপুরে ১৬৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার বরঙ্গাইল বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পযর্ন্ত কৃষক তার জমি থেকে মরিচ তুলে নিয়ে আসেন। এ বাজারের আড়ৎদাররা মরিচ ক্রয় করে ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। অনেক পাইকার এই মরিচ ক্রয় করে এক্সপোর্টারের মাধ্যমে দেশের বাহিরে পাঠান। প্রথমে মরিচ ক্রয় করে আড়তে রাখেন পরে কাগজের কাটুনে করে ৫ থেকে ৯ কেজির প্যাকেট করেন। মরিচ রপ্তানি করার আগে প্রতিটি কাটুনে এক্সপোর্টারের স্টিকার বসানো হয়, তার পর গাড়ী যোগে বিমানবন্দরের নিয়ে যাওয়া হয়।
বরঙ্গাইল পাইকারী আড়তের মেসার্স তাজ বাণিজ্যলয়ের তাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে কিছু দিন আগেও কারেন্ট মরিচ ছিলো যা দুবাইতে বেশ চাহিদা ছিলো। এখন বিন্দু মরিচের চাহিদা বেশি হওয়াতে এই মরচিগুলো মালেশিয়া ও সৌদি আরবে যাচ্ছে। আমরা যারা আড়তদার আছি তাদেরকে আড়ৎদারি দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টন মরিচ এক্সপোর্টাররা নিয়ে যায় ঢাকায় এবং সেখান থেকে বিমানে করে বিভিন্ন দেশে যায়।
বরঙ্গাইল পাইকারি আড়তের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সিদ্দীক মোল্লা বলেন, এই বরঙ্গাইল আড়ৎ দেশের মধ্যে অন্যতম কারণ এই আড়তের কাঁচা মরিচ বিদেশের রপ্তানি হয়। রপ্তানি হলে আমাদের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা আয় হয়। এই অঞ্চলের কাঁচা মরিচ বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পরপরই আবাদ যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি কৃষক লাভবান হচ্ছে।
মালেশিয়ায় মরিচ রপ্তানিকারক সুমাইয়া এন্ড ব্রাদার্সের এমডি মিরাজ-উল ইসলাম বলেন, এই জেলা থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে দশ টন মরিচ বিদেশে যাচ্ছে বিমানের কার্গোতে করে। আমাদের দেশ থেকে গার্মেন্স সামগ্রীর পাশাপাশি যদি প্যারিসিবল সামগ্রীর জন্য আরো কিছু বিমানে যায়গা করে দিতো তবে ভালো হতো । বিমানে যান্ত্রীক ত্রুটি হয় বা সিডিউল বিপর্যয় হয় এটা যদি আগের দিন জানিয়ে দিতে পারে তবে আমাদের লোকসানের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। হঠাৎ করে বললে আমাদের লোকাল বাজারে কম দামে মরিচগুলোকে বিক্রয় করতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মুহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ বলেন, কারেন্ট মরিচ শেষ হলেই বিন্দু মরিচ চলে আসে বাজারে। এই জেলা থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের মরিচ দেশের বাহিরে যাচ্ছে। স্থানীয় চাষীরা আমাদের কালেকশন সেন্টারে নিয়ে আসে এবং বাকিটা একটি মিডিয়া ঢাকাতে নিয়ে যায়। এছাড়া বরঙ্গাইল আড়তে এসেও অনেক এক্সপোর্টাররা নিয়ে যায়। মরিচের বাজার দর কি বিমানের ভাড়ার উপর কিছুটা নির্ভর করে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে সে জন্য বিমানের ভাড়াও হয়তো বেড়েছে। তবে কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু ভর্তুকি দিতো তবে আমাদের দেশ থেকে অনেক পন্য বিদেশে রপ্তানি হতো বলেও মন্তব্য করেন এই উপ-পরিচালক।