দীর্ঘ ১৯ বছর পর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত ছিলেন নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরগণ। কে হবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কান্ডারি এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিলো চোখে পড়ার মতো। সম্মেলন সফল করার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিলো ব্যাপকভাবে।
সম্মেলনকে ঘিরে আর নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে অন্যরকম উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে। পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির, লবিং শেষে এখন নানাভাবে কাউন্সিলরদের মন জয় করতে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে কীভাবে নির্বাচিত হবেন নতুন সভাপতি-সম্পাদক তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক চলছিলো।
প্রার্থীদের রঙ্গীন বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেষ্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে পৌর শহর। ফেসবুকেও সমানতালে নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে অন্তত ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর তালিকায় প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত না করার অভিযোগ উঠেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চূয়ালি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি। সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি। বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম, মোহাম্মদ আলী খোকন সহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ এর নেতৃবৃন্দ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসমাইল খোকন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালনা হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সম্মেলনে অন্তত দু’ডজন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন। রাজনীতিতে অবদানের কথা তুলে ধরে তারা ইতোমধ্যে কেন্দ্র, জেলা, উপজেলাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন।
সম্মেলন উপলক্ষে রায়পুর ও সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী রবিদাসের পুল থেকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ-রায়পুর উপজেলার বোর্ডারবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে ১০ কিলোমিটার সড়কের ওপরে স্থাপন করা হয়েছে তোরণ। সড়কের দুই পাশে শত শত ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করে রেখেছিলো।
উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি পদে যারা প্রার্থী হয়েছান তারা হলেন, মামুনুর রশীদ(এম,এ) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগ। এড. মিজানুর রহমান মুন্সী(এম,এস,সি), সদস্য, উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগ তিনি সাবেক সাঃ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতি। যিনি আগের সম্মেলনে সভাপতি পদে মরহুম দুলাল চৌধুরীর সাথে ৩ ভোটে হেরেছেন।সাইয়েদুল বাকিন ভূইয়া(এম,এ), সাবেক ছাত্রনেতা। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী, শিক্ষানুরাগী তিনি সাবেক বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল এমপির জামাতা।মামুনুর রশীদ(বি,এ), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (১৯৮৯-১৯৯১)। নবী মাহেনুর করিম মান্নু চৌধুরী(বি,এ) কেন্দ্রীয় হকার্স লীগের নেতা। রায়পুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাঃ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা বকুল চৌধুরীর সহোদর।
আলতাফ হোসেন হাওলাদার (বিএসসি), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। সাবেক সভাপতি, ২ নং চরবংশী ইউনিয়ন।তবে বিদ্রোহী করে ক্ষমা পেলেও কাউন্সিলর করেনি নিজ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটি উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদেরকে।তার প্রার্থীতা ঘোষণা করলেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নতুন নির্দেশনার পরে নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন রায়পুর আওয়ামীলীগ এর ভোটব্যাংক খ্যাত আলতাফ মাষ্টার।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসমাইল খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজি নাজমুল কাদের গুলজার,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, বর্তমান মেয়র গিয়াস উদ্দীন রুবেল ভাট, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়া,যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কামরুল হাসান রাসেল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিক খান ,ইউছুপ আজম সিদ্দিকী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম তুষার ১০ জন মাঠে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।
উল্লেখ্য , ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিন বছরের জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠন হয়েছিল। ২০০৩ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন (দুলাল) চৌধুরী সভাপতি এবং রায়পুর পৌরসভার মেয়র হাজী ইসমাইল খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৬৭ সদস্যের এই কমিটির সভাপতিসহ ইতিমধ্যে ২১ নেতাই মারা গেছেন।