মাদারীপুরের পুরান শহরের ৯০নং পুরান শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয় ভবনটি দূর থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, কিন্তু ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ার চিত্র। ভবনের ২য় ও ৩য় তলায় পলেস্তরা খসে পড়ায় মূল ভীমের মরিচা ধরা রড বের হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভবনের সবগুলো কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। এমন আশঙ্কায় ক্লাসে উপস্থিতির হার দিনের পর দিন হ্রাস পেতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় চলতে থাকলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূণ্যের কোঠায় পৌছতে বেশী সময় লাগবেনা। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও এ ভবনের নীচ তলায় এখনো ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে ক্লাস নেয়া হলেও এতে মনোযোগ দিতে পারছেন না ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।
১৯৬৭ সালের মাদারীপুর মিলন সিনেমা হল সংলগ্ন মাত্র ২৪.৪৯ শতাংশ জমির উপর ৯০ নং পুরান শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫৮ জন। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে প্রশাসনিক ও শ্রেণীর কার্যক্রম। আছে শ্রেণীকক্ষ, আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২০ সালের ১লা মার্চ প্রধান শিক্ষক ও ২০২১ইং সালের ৪ জানুয়ারী একজন সহকারী শিক্ষক রিটায়ার্ডের পর ১৪ জনের স্থলে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১২ জন।
২০১৯ইং সালের পিইডিবি প্রকল্পের অর্থায়নে বিদ্যালয়টি পুনঃনির্মাণ করা হলেও কাজের মান অত্যান্ত নিম্নমানের হওয়ায় ২ বছর যেতে না যেতেই ভবনের বিভিন্ন কক্ষ, বারান্দা, সিড়ি, ভবনের বাহিরে ও ভিতরের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তরা ও ছাদের কিছু অংশ খসে পড়ে গেছে। এর ফলে মরিচা ধরা লোহার রড দেখা যাচ্ছে। স্কুল চলাকালীন অবস্থায় জানালা ভেঙ্গে পড়েছে তাই দ্রুত বিদ্যালয়ের একটি অত্যাধুনিক নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান শিক্ষক ও ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক বলেন, কয়েকদিন আগে পাঠদান করাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে। এতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ভয়ে চিৎকার শুরু করে। তবে এতে কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়নি।
শিক্ষকরা আক্ষেপ করে বলেন, একটা শিশুর মানষিক বিকাশে সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সৃজনশীল খেলার মাঠ দরকার কিন্তু এ বিদ্যালয়ে নেই কোন খেলার মাঠ, নেই কোন বিনোদনের ব্যবস্থা। যার ফলে বাৎসরিক কোন অনুষ্ঠান করতে পারছিনা। এ থেকে শিক্ষার্থীরা মানষিক বিকাশ ও সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। পাশে রয়েছে পুলিশ ক্লবের প্রাচীর ঘেরা মাঠ। পুলিশ ক্লাব কর্তৃপক্ষ একটা গেট করে দিলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করার সুযোগ ও আমরা বিশেষ দিন যেমন বিজয় দিবস, মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর সকল কর্মসূচী পালন করতে পারতাম। ফলে শিক্ষার্থীদের মানষিক বিকাশ আরো বৃদ্ধি পেত।
এ্র প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষীকা সেলিনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শুধু বিপদ না মহাবিপদ বলতে পারেন, আমরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি কখন যেন ভবন ভেঙ্গে পরে। আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে মাদারীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাশিদা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের জরাজির্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হওয়ার পর ওখানে ক্লাস করতে নিষেধ করেছি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহিত করছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছে। ক্লাস করাতে নিষেধ করলে এখনো ক্লাস চলছে কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের নলেজে নেই তবে ক্লাস চললে এখনি আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা র্কমর্কতা নাসির উদ্দিন একমাত্র ভবনের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত আছি। বিদ্যালয়ের দুরবস্থার ছবি সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।