বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে সিলেটের বন্যা কবলিতরা
25, May, 2022, 12:20:25:PM
মুফিজুর রহমান নাহিদ সিলেট গ্রাম ও শহর- দুর্ভোগের ধরণ একই। কোথাও খাদ্য, কোথাও বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মানবেতর দিন পার করছেন সিলেটের পানিবন্দি মানুষ। পানির সন্ধানে তাদের ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-৩ এর অধীনস্থ দক্ষিণ সুরমা এলাকাও বন্যা কবলিত। পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেক এলাকাগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তাই স্থানীয় লোকজন বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েছেন।
নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিটি করপোরেশনের পানি বিশুদ্ধকরণ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) প্লান্টও তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি আরো চারটি পাম্পও তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে এসব এলাকার জনগণও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না। সিলেটের অন্তত ২০টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যায় কবলিত। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহের একমাত্র ভরসা টিউবওয়েলও পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজন দূরদূরান্ত থেকে কলসি, হাড়ি-পাতিলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।
এসব এলাকার গ্রামীণ জনপদে পানি ও খাবার সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন। নিত্যদিনের উপার্জনের সংসার চালানো মানুষরা বন্যায় আটকে পড়ায় তাদের আয়-রোজগারে প্রভাব পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে রান্নার ব্যবস্থা নেই। শুকনো খাবারের পাশাপাশি তাদের রান্না করা খাবারও বেশি প্রয়োজন। শহর এলাকায় খাবার সমস্যা না থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরের বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বলছেন, কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। তার ওপর নেই পানি। খাবার বা টয়লেটের জন্য তারা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষজন বৃষ্টির পানি ছেঁকে পানের জন্য ধরে রাখছেন।
সিলেট নগরের মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা তুষার আহমদ মান্নার বাসার টিউবওয়েলটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি জমিয়েছিলেন। সেগুলো কাপড়ে ছেঁকে পাত্রে রাখছেন। এরপর সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করবেন বলে তিনি জানান।
ভোগান্তিতে পড়েছে নগরের শাহজালাল উপশহর, শেখঘাট, কলাপাড়া, সোনারপাড়া, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপার, চালিবন্দর কানিশাইল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। উপশহর এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, মঙ্গলবার থেকে আমরা পানিবন্দি। বিশুদ্ধ পানির অভাব। ময়লা পানি মাড়িয়ে পানের জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয়।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখনো অনেক ব্লকে কোমর সমান পানি, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পানির মটর তলিয়ে গেছে, তাই পানি তুলতে পারছেন না। কিছু কিছু জায়গায় মটর ঠিক থাকলেও ট্যাংকি ময়লায় নষ্ট হওয়ায় পানি তোলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান জালালাবাদকে বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ময়লা পানি ঢুকেছে। এজন্য সেটি চালু করা যাচ্ছে না।
এছাড়া পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে থাকায় চারটি পাম্প বন্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় দুই হাজার লিটারের ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।কানাইঘাটে ওসুরমা ও লোভা নদীর পানি কমতে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসি মানুষের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে। গত কয়েকদিন ধরে বন্যা দূর্গতরা বৃষ্টির পানি জমিয়ে কোনমতে দিনানিপাত করছিলেন, ইতোমধ্যে তাও শেষ হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছেন তারা।উপজেলার নিম্নাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
পানির স্রোতের কারণে গ্রামীণ অধিকাংশ সড়কে বড় বড় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি কমার সাথে সাথে উপজেলার সদর ও পৌর এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। রবিবার কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।সরকারিভাবে বন্যা দূর্গতদের জন্য এখন পর্যন্ত ৪৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বেশ কিছু প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যা দূর্গতদের মাঝে প্রশাসানের উদ্যোগে বিতরণ করা হয়েছে।কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমিন চৌধুরী জানান, কানাইঘাটে বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝে আরো ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে কথা বলেছেন, এবং কানাইঘাটের সার্বিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।এদিকে বন্যার্তদের পাশে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।