স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক কীটপতঙ্গ ও ছোট মাছে বড় উপকার দেশের জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মৌমাছি, কীটপতঙ্গ, ছোট মাছ আর পাখি। কীটপতঙ্গ কমায় পাখির সংখ্যা কমছে।
মাত্র আধা ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পতঙ্গ। আকারে ছোট হলেও এগুলোর গুরুত্ব অনেক। মধু ও মোম উৎপাদনের প্রধান কারিগর হিসেবে এই পতঙ্গের পরিচিতি বেশি। কিন্তু জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০ শতাংশ উদ্ভিদের পরাগায়নে প্রধান ভূমিকা রাখে এটি। এই পতঙ্গের নাম মৌমাছি।
মৌমাছির পাশাপাশি ছোট ছোট আরও কীটপতঙ্গ ও প্রাণী মানুষের খাদ্য উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখে। কিন্তু দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বালাইনাশক দিয়ে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষাকারী অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে মৌমাছি, পোকামাকড় মেরে ফেলা হচ্ছে। ছোট এসব প্রাণী কমে গেলে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন ৩৫ শতাংশ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এফএওর ২০২২ সালের বিশ্ব জীববৈচিত্র্য ও কৃষিবিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ছোট ছোট প্রাণীর ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে ছোট পাখি, ছোট মাছ আর অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া দেশের খাদ্য উৎপাদন ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। এতে উপকারী পোকামাকড়ের ৯০ শতাংশ মারা যাচ্ছে। পাখির ৭০ শতাংশ খাবারের চাহিদা পোকামাকড়ে পূরণ হয়। ফলে পোকা কমে যাওয়ায় খাদ্যাভাবে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) এ দেশীয় পরিচালক রাকিবুল আমিন বলেন, দেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষা বলতে সবাই শুধু বনভূমি রক্ষা বোঝে। অথচ আমাদের জলাভূমি, সাগর, জনবসতি এলাকা এমনকি শহরেও অনেক প্রাণী থাকে। সেগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ বছর জীববৈচিত্র্য দিবসের স্লোগান ‘সবার জন্য সুন্দর আগামীর নির্মাণ’। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করে থাকে। তবে দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
মৌমাছিতে আশার আলো শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন দুই যুগ ধরে মৌমাছি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে দুই–তিন বছর ধরে মৌমাছির সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর মতে, দেশে শর্ষে, সূর্যমুখী ও লেবুজাতীয় ফলের চাষ বৃদ্ধির ফলে মৌমাছি বাড়ছে। মৌমাছি এসব উদ্ভিদের ফুল থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, যা আবার মানুষ মধু হিসেবে সংগ্রহ করে।বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের হিসাবমতে, দেশে প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন মধু উৎপাদিত হয়। ১৯৯০ সালে দেশে ইউরোপীয় মৌমাছি নামে একটি প্রজাতি আনা হয়। এটি মূলত ফল ও তেলজাতীয় উদ্ভিদনির্ভর। গত কয়েক বছরে এই প্রজাতির মৌমাছির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেনের পর্যবেক্ষণ বলছে, মৌমাছি বাড়লে অন্য উদ্ভিদ ও ফসলের পরাগায়ন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে মৌমাছির কারণে ফল ও তেলজাতীয় উদ্ভিদে উৎপাদন ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্ভিদ যত বাড়বে, অন্যান৵ ফসলের প্রাকৃতিক পরাগায়ন তত বাড়বে। এটি সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
কমছে পাখির সংখ্যা এফএওর প্রতিবেদন বলছে, ১৯৭১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পাখির সংখ্যা ৫৫ শতাংশ কমেছে। দেশি পাখির সংখ্যা কমার পাশাপাশি পরিযায়ী পাখি আসার হারও দ্রুত কমছে।
পাখি পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের হিসাবমতে, গত ৫ বছরে দেশে পাখির সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ কমেছে। সংস্থাটির চলতি বছরের পাখিশুমারিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে ২ লাখ ৭৬ হাজার পাখি দেখা গেছে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখের বেশি। পোকামাকড় কমে যাওয়ায় পাখি আগের চেয়ে কম খাবার পাচ্ছে। পাখির বিচরণ এলাকায় মানুষের বিচরণ বৃদ্ধি এবং খাবার কমে যাওয়ায় পাখির সংখ্যা দ্রুত কমছে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, দেশের উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত শিল্পায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো পাখি আসছে না।
|