এবারের বোরো মওসুমে ফসলে ভরপুর ছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সোনালী ফসলের মাঠ। উপজেলার প্রায় সকল মৌজাতেই হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ধানের বাম্পার ফলন। ফসলের এ বাম্পার ফলন দেখে আনন্দে হেসেছিল কৃষকেরা।
কিন্তু স্থানীয় কয়েকটি রাইচমিল কেন্দ্রিক ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির কারনে মুহুর্তেই যেন মলিন হয়ে গেছে তাদের সেই হাসিমুখ। ধানের মূল্য শুনে তারা হতবাক।
রমজান মাসের শেষের দিকে ধান কাটা শুরু হয়ায় এ বার বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কৃষকদের, ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দৈনিক মজুরীতেও ঠিক ভাবে মিলেনি ধান কাটার শ্রমিক বা কামলা।
তা ছাড়া সম্পূর্ণ সেচের পানি নির্ভর এই চাষে উপজেলার মৌজা সমূহে কানি(৪০ শতক)জমি প্রতি পানির মূল্য ছিল ২ হজার থেকে ২২শত টাকা। তার উপর কয়েক প্রকারের সার ও উচ্চমূল্যের কীটনাশকতো রয়েছেই। সব মিলিয়ে কানি প্রতি চাষের খরচ ও ফলনের হিসেব বিবেচনায় ধানের মূল্য একেবারে অপ্রতুল বলে জানান কৃষকেরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চিকন প্রজাতির ধান প্রতি আড়ি(১০কেজি) ২২০ টাকা এবং মোটা প্রজাতির ধান প্রতি আড়ি(১০কেজি) ১৯০ টাকা দরে ক্রয় করছেন স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বটতলী, চাঁপাতলী, গুন্দ্বীপ, বারশত ও তুলাতলী মৌজার বেশ ক`জন কৃষকের সাথে আলাপকালে ধানের দর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে যারা কাজ করছি তাঁদের খবর আজ কেউ রাখেনা। অতি কষ্টে ফলানো ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে অতি কম মূল্যে, তাঁরা আরওবলেন ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যেখানে সবকিছুর দাম উর্ধ্বমূখী সেখানে ধানের এই অবমূল্যায়ন সত্যিই দুঃখজনক।
গুন্দ্বীপের কৃষক জাগির খান, চাঁপাতলীর মোহাম্মদ হোসেন, নুরুল ইসলাম, বারশতের মকবুল আহমদসহ তুলাতলী মৌজার একাধিক কৃষকের সাথে কথা বললে তাঁরা দৈনিক স্বাধীন বাংলাকে জানান ব্যায়বহুল এ মওসুমে এক কানি(৪০শতক) জমিতে ধান রোপন থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়ে ১৭থকে ১৮হাজার টাকা। তার উপরে তিন থেকে সাড় তিন মাস ধরে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমতো আছেই। বিপরীতে কানি প্রতি ধান উৎপাদন হয় ৮০ থেকে ৯০ আড়ি। (১০ কেজি আড়ি)। বর্তমান ধানের বাজার মূল্য হিসাব করলে নিজের পরিশ্রমতো দুরের কথা এর পেছনে নগদে খরচ করা অর্থও উঠে আসছেনা।
ধানের এই অবমূল্যায়নের জন্য স্থানীয় কয়েকটি রাইচমিল কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দায়ী করে তাঁরা বলেন, আমাদেরকে চরম ভাবে ঠকানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি প্রয়োজন, কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তাঁরা। অন্যথায় আগামীতে কৃষিকাজের প্রতি মানুষের অনীহা আসতে পারে বলেও আশংকা করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন স্থানীয় পর্য্যায়ে ধানের মূল্য কম এর বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি, শিগগিরই এই ব্যাপরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন এই মওসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সকল প্রজাতির ধান প্রতি আড়ি(১০কেজি)২৭০ টাকা দরে সংগ্রহ করছে উপজেলা খাদ্য অফিস। কৃষকেরা চাইলে সেখানে ধান সরবরাহ করতে পারেন।