দুলাল কৃষ্ণ নন্দী, পটুয়াখালী: কাঙ্খিত ইলিশ না মেলায় অলস সময় পাড় করছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। জেলার বিভিন্ন নদীতে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ। যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি করে তেল খরচ বহন করাই দায়। এ কারণে চরম হতাশায় রয়েছেন জেলে ও তাদের পরিবার। দাদনে আনা ঋণের টাকা পরিশোধ ও সংসারের ব্যয়ভার বহন নিয়ে চিন্তিত তারা। জেলেদের দাবী নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তারা মাছ শিকারে বিরত থাকলেও একটি স্বার্থন্বেষী জেলেদল (বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা) বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করেছেন। যার কারণে এখন সাগরে কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশের দেখা মিলছেনা। জানা গেছে, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে গত মার্চ এবং এপ্রিল মাসে জেলার তেতুলিয়া, আন্ধারমানিকসহ বিভিন্ন নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা ও বাজারজাত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও সাগরে ছিলো না কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা। যার কারণে জেলেদের অবাদ বিচরণ ছিলো সাগরে। তেতুলিয়া পাড়ের জেলেরা টানা ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার পরে অনেক বেশি মাছ পাওয়ার আশায় দলে দলে সাগরে গেলেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা বিক্রি করে তেল খরচ বহন করাই দায়। অপরদিকে সাগরে চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে জুন পর্যন্ত মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার কারণে চিন্তিত সাগর ও গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলেরা। জেলার মহিপুর, আলীপুর মৎস্য বন্দর, রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ জেলে পল্লী এবং দশমিনার আউলিয়াপুর, গোলখালি জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে নোঙ্গর করা। জেলেরা কেউ ট্রলারে বসে, আবার কেউবা বেড়িবাঁধের পারে বসে ছেঁড়া জাল সেলাই ও নতুন জাল গোছিয়ে রেখেছেন এবং মাছ ধরার ট্রলার মেরামতে অলস সময় পার করছেন। জানতে চাইলে জেলেরা জানান, ইলিশ না পাওয়ায় অনেক ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে। তাই সাগরে না গিয়ে ঘাটে নোঙর করে আছেন তারা। মহিপুর-আলিপুর মৎস্য বন্দরের জেলে ফিরোজ মিয়া জানান, তেতুলিয়া নদীতে অবরোধ ছিল কিন্তু সাগরে অবরোধ না থাকলেও তেমন মাছের দেখা মিলছে না। এখন ২০ তারিখ থেকে আবার অবরোধ হওয়াতে আমরা খুব চিন্তায় আছি। এক সপ্তাহ সাগরে থাকতে যে পরিমাণ খরচ হয়, মাছ বিক্রি করে তা উঠেনা। রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ এলাকার জেলে খলিল মুন্সী জানান, আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে, তবুও সাগরে মাছ নেই। গত সপ্তাহে জাল ট্রলার নিয়ে সাগরে গেছি। তেল ও খাবার কেনার জন্য ১৮ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। কিন্তু মাছ বিক্রি করে পাইছি মাত্র ৯ হাজার টাকার। এত টাকা ঘাটতি হলে ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। এ জন্য সাগর থেকে ফিরে আসার পর এবার আর যাইনি। মাছ পড়া শুরু করলে আবার যাব। পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্তকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘ইলিশ শিকারের মৌসুম এখনো শুরু না হওয়ায় কিছুটা কম ইলিশ পাচ্ছে জেলেরা। তবে সামনে ইলিশের মৌসুমে কাঙ্খিত ইলিশ মিলবে জেলেদের জালে। ‘বিগত ২ মাস বিভিন্ন নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সাগরে ছিলো না, চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে জুন পর্যন্ত সাগরে নিষেধাজ্ঞায় ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধির পাবে বলেও মনে করেন তিনি।