মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অধিকাংশ শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে শহরে। কর্মরত রয়েছে বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরিতে। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে ইরি-বোরো ধান কাটা শ্রমিকদের। ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে বিপাকে শত শত কৃষক। এক মণ ধানের দামেও মিলছেনা একজন শ্রমিক। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। তিন বেলা খাবার সহ জনপ্রতি শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে ৯ শত টাকা, এছাড়াও রয়েছে চা, পান-সিগারেট সহ অন্যান্য যাবতীয় খরচ। এদিকে এক মণ ধানের বর্তমান বাজার মূল্য ৭ থেকে ৮শ’ টাকা। ফলে এক মণ ধানের বাজার মূল্যে একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় হতাশ কৃষকরা।
সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইলেও দেখা দিয়েছে এমন চিত্র। উপজেলার স্থানীয় কৃষকরা জানায়- বোরো ধান চাষের জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, পানি সেচ, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, ধান কাটার শ্রমিক খরচ সহ প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ পরছে প্রায় হাজার টাকা। কালবৈশাখী ঝড়-তুফানের আগে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা থাকলেও শ্রমিক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে তা। শ্রমিক সংকটের কারনে বাধ্য হয়েই উচ্চ মজুরি পরিশোধ করতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
উপজেলার বানিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক খলিল আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, দুইএকর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে, শ্রমিকের বড়ই অভাব। আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাধুটি গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, শ্রমিকের মজুরি বেশি, এ দামে ধান কেটে পোষায় না। ধান তো আর মাঠে ফেলে রাখা যাবে না, বাধ্য হয়েই শ্রমিক নিতে হয়। উত্তর পাড়া গ্রামের কৃষক রেজা মিয়া বলেন, ধানের যে দাম আর শ্রমিক সংকটে আমাগো জীবন শেষ। লাভ তো পরের হিসাব, খরচ-ই উঠব না।
এসকল সমস্যার সমাধানের বিষয়ে কৃষকদের প্রযুক্তি নির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে সরকারের ভর্তুকি মূল্যে বর্তমানে কম্বাইন্ড হারভেস্টার রয়েছে চারটি। নতুন আরো সাতটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার আসলেও কৃষকরা গ্রহণ করেছে একটি এবং ফেরত যাচ্ছে ৬টি। কৃষকদের প্রযুক্তি নির্ভরশীল না হলে এসকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় ক্রয় করবে খাদ্য অধিদপ্তর, এমনটাই জানালেন ঘাটাইল উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা খোরশেদ আলম মাসুদ। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন কৃষকরা। সরকারের সহযোগিতা পেলে কৃষকদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারে এমনটাই অভিমত স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের।