এ. এম উবায়েদ : গত দুটি বছর করোনার কারণে ঈদ জামাত হতে পারেনি শোলাকিয়ায়, শত বছরের ঈদ জামাতে ঘটে ছন্দপতন। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদ মানেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত। এবার ১৯৫ এবার ঈদে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুখরিত হতে যাচ্ছে শোলাকিয়ার মাঠ। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাসে কখনও বন্ধ থাকেনি শোলাকিয়ার ঈদ জামাত। তবে, করোনার কারণে একটানা দু’বছর জামাত অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য এবারও শোলাকিয়া স্পেশাল দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জামাত শুরু প্রতিবছরের ন্যায় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবার দেওয়া হচ্ছে চার স্থরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার পরিদর্শন করছেন এবং বসছেন দফায় দফায় বৈঠকে। ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে চার স্থরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রত্যেক মুসল্লিকে বেশ কয়েকবার হতে হবে তল্লাশির সম্মুখীন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে মাঠসহ পুরো এলাকা।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, এবার অনেক বেশি লোক হবে শোলাকিয়ায়। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে এবার আমরা বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, ছয়টি অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে, এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশপথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর জামাত না হলেও এবার জামাত হবে। মাঠে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। তাই টুপি, জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছুই মাঠে নেওয়া যাবে না। ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা চান।
জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। রেওয়াজ মোতাবেক, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় বন্দুকের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।