স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : পবিত্র রমজান মাসে অনেকেই রোজা রাখেন। এসময় রোজাদাররা সাধারণত তিনবার খাবার গ্রহণ করেন। এগুলো হলো- ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে। সারা দিন উপোস থাকার জন্য শরীরের ক্যালরির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বছরের অন্যান্য সময় আমরা সারা দিনের খাবারে যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করি, রমজান মাসে তিন বারের খাবারে ঠিক ততখানিই ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ক্যালরি কম বা বেশির জন্য ওজন বাড়তে পারে বা কমতে পারে। এ সময় খাবারের ধরন বদলালেও ক্যালরি ঠিক রেখেই খাবার খেতে হবে।
ইফতারে কী খাবেন
সারা দিন উপবাস থাকার পর ইফতার হতে হবে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য, রুচিসম্মত ও সহজলভ্য। এ সময় কখনোই বাসি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইফতারের প্রথম উপাদান শরবত। এটি পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। একেক পরিবারে একেক ধরনের শরবত পছন্দ করে। যেমন-কাগজি লেবু, ইসবগুল, তোকমা, চিড়া, তেঁতুল, কাঁচা আম, সিয়াসিড, দুধ, দই, বেল, কমলা, মালটা, বেদানা, তরমুজ ইত্যাদি। তবে ডায়াবেটিস থাকলে চিনি বা গুড়ের পরিবর্তে বিকল্প চিনি দিয়ে শরবত করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডাবের পানি দিয়েও ইফতার শুরু করা যায়। তবে ফলের রসই উত্তম পানীয়। কারণ এতে আছে খনিজ লবণ ও ভিটামিন। ইফতারের প্রধান উপাদান ছোলা। এটি যেমন শক্তিবর্ধক, তেমনি রক্তের কলস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে খেতে হবে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী। ছোলা ছাড়াও খাওয়া যায় কাবুলি মটরের চটপটি, ঘুগনি ইত্যাদি। রোজার সময় হালিম খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। চাল-ডাল-মাংস-তেল যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকরও বটে। ইফতারির প্লেটে ফল থাকা স্বাস্থ্যসম্মত। এতে ভিটামিন ও লৌহের অভাব পূরণ হতে পারে। পাকা কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে, কমলা, আপেল ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ প্রস্রাবের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। রোজার সময় ফল পানিস্বল্পতাও রোধ করে। হৃদরোগীদের জন্য কলা ও আপেল চমৎকার ফল। খেজুরে রয়েছে প্রচুর লৌহ। এ সময় দুটি খেজুর সে অভাব মেটাতে পারে। কাঁচা সবজির মধ্যে গাজর ও শসা-টমেটোর ভূমিকা কম নয়। এতে ক্যারোটিন পাওয়া যাবে। কাঁচা ছোলায় মিশাতে পারেন আদা, টমেটো, শসা, পুদিনা পাতা, ধনিয়াপাতা, কাঁচা মরিচ কুচি ও লবণ।
সন্ধ্যা রাতের খাবার
এ সময় হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। তাহলে সেহরি খাওয়ার ইচ্ছাটা নষ্ট হয় না। ইফতারিতে ডালের আধিক্যও থাকে বলে সন্ধ্যা রাতের খাবারে ডাল বাদ দিতে পারেন। মাংসের চেয়ে হালকা মসলার রান্না ছোট বড় মাছ খেতে পারেন। এর সঙ্গে সবজি তো অবশ্যই থাকবে। যে কোনো ধরনের ভর্তা খেলেও খাবারে রুচি আসবে।
সেহরিতে কী খাবেন
অনেকে মনে করেন, যেহেতু সারা দিন উপবাস থাকতে হবে, তাই বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন, যাতে ক্ষুধা না লাগে। আবার অন্যদিকে আলসেমির জন্য অনেকে খুবই কম খান অথবা একেবারেই খান না। দুটিই ক্ষতিকর। অতিভোজনে বদহজম হয়ে পেটে গ্যাস ও ডায়রিয়া হতে পারে। আবার না খেয়ে থাকলে শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ সারা দিনের উপবাস আমাদের দেহের বিপাক ক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আনে। এতে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হয় বলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সেহরিতে ভাত ছাড়াও খাওয়া যেতে পারে রুটি-পরোটা, পাউরুটি, দুধ-ডিম, দুধ-সেমাই-ডিম। কোনোটাই খারাপ নয়। এ সময় মাছের পরিবর্তে মাংস খাওয়াটা সুবিধাজনক। যেভাবেই হোক অবশ্যই যেন খাবারে প্রোটিন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময় এক কাপ দুধ বা আধা কাপ দই খাওয়াটা স্বাস্থ্যসম্মত।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা