স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক : ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দেয় নতুন জামা-জুতা, শাড়ি আর বাহারি সব প্রসাধনী। অনেকে আবার এসবের জন্য নির্ভর করেন আমদানি করা বিদেশি পণ্যের ওপর। রাজধানীর পলওয়েল সুপারমার্কেটের দোকানিদের কেউ কেউ বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন। ফলে মার্কেটটিতে দেশি পণ্যের পাশাপাশি চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অন্য দেশ থেকে পণ্য এনে ঈদ বাজারের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রোজার শেষ মুহূর্তের ভিড় এড়াতে অনেক ক্রেতা এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছেন ঈদ কেনাকাটা। এদিকে মিরপুর বেনারসি পল্লীও জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটায়। সেখানকার দোকানিরা আশা করছেন, করোনা সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর যে ক্ষতি তাঁদের হয়েছে, এবার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
গতকাল রবিবার দুপুরে পলওয়েল সুপারমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটটির নিচতলা ও দোতলার দোকানগুলোয় চলছে খুচরা বেচাকেনা। তৃতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলার দোকানগুলো পাইকারি পণ্য বিক্রি করলেও ঈদ উপলক্ষে খুচরা বিক্রিও করছে। মার্কেটটিতে নামিদামি বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, দিন দিন ক্রেতার উপস্থিতি বাড়লেও এখনো আশানুরূপ খুচরা বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি, রোজার শেষ সপ্তাহে সেটি হবে। তবে রোজার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়েছে পাইকারি বিক্রি।
মার্কেটটির দ্বিতীয় তলায় ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘দুই বছর কোনোমতে ব্যবসা ধরে রেখেছি। এবার আশা করছি, ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আমার দোকানে ২২০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা দামের জিন্স প্যান্ট রয়েছে। শার্ট রয়েছে ১৩০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা দামের। আসলে দামের চেয়ে পণ্যের মান ভালো পান বলে ক্রেতারা আমাদের এই মার্কেটে ভিড় জমান। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্য আমদানি করি। ’
ওই দোকানে ছেলের জন্য টি-শার্ট কিনতে আসা নুসরাত জাহান নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘ছেলের জন্য ঈদের কেনাকাটা করব। এই মার্কেটে ভালোভাবে কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। প্রতিবছর ঈদে এখানেই আসি। এবার ছেলের জন্য ভালো বিদেশি টি-শার্ট খুঁজছি। ’
মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মূলত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের পোশাকই বেশি পাওয়া যাচ্ছে এখানে। ছোট-বড়দের থ্রিপিস, শর্ট ও লং লেহেঙ্গা, বোম্বের পাঞ্জাবি, পাকিস্তানি থ্রিপিস, ছেলেদের শার্ট, জুতা, কেডসও রয়েছে। এ ছাড়া মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেলও আছে।
পলওয়েলের ফিডা ফ্যাশনে পাওয়া যাচ্ছে তরুণদের হাল ফ্যাশনের পোশাক। সেখানে ইন্ডিয়ান জিন্স পাওয়া যাচ্ছে ২০০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকার মধ্যে। মার্কেটের নিপ্রতা এন্টারপ্রাইজের দোকানি জানান, তাঁদের দোকানে থাইল্যান্ড, ইতালির মূল ব্র্যান্ডের শার্ট ও টি-শার্টের দাম ২০০০-২৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পলওয়েল দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এম সালাউদ্দিন বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই বছর ক্ষতি হয়েছে। এবার আশা করছি ভালো কিছু হবে। মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি ক্রমে বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। এখন স্কুল ও অফিস খোলা, ইফতার, তারাবির নামাজ সব মিলিয়ে অনেক ক্রেতা মার্কেটে আসতে পারছেন না। ’
জমে উঠেছে মিরপুর বেনারসি পল্লীর ঈদ বাজার। বেনারসি পল্লীর ‘বিগ বাজার’ দোকানে আসা ক্রেতা শারমিন জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার কাছে ঈদের শাড়ি মানে বেনারসি পল্লীর জামদানি। করোনার সময়ে শাড়ি কেনা হয়নি, কোনো আত্মীয়কেও দেওয়া হয়নি, এবার তাই আগেভাগে নিজের ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য চারটি শাড়ি কিনলাম। দাম মোটামুটি নাগালেই। ’
বিগ বাজারের অন্যতম পরিচালক জাহিদুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্রেতা বেশ ভালোই আসছে, বিক্রিও হচ্ছে। আমরা আশাবাদী। এবার ঈদে নিশ্চয়ই ভালো বিক্রি হবে। সব ধরনের শাড়ি বিক্রি হয় আমাদের এখানে। তবে তুলামূলক জামদানির চাহিদা বেশি। ’
বেনারসি পল্লীর বিভিন্ন শাড়ি দোকানের মধ্যে রূপ সিঙ্গার, রূপসী বেনারসি, বেনারসি অলংকার, ঢাকাইয়া জামদানি, নিবিড়, বেনারসি পল্লী এশিয়া বাজার, বেনারসি কিং, ডায়মন্ড বেনারসি, বৈশাখী শাড়ি মেলা, পাবনা বেনারসি মিউজিয়াম, ফার্স্টলেডি বেনারসি দোকানে ক্রেতাদের বেশি ভিড় দেখা গেছে গতকাল। বেনারসি পল্লীতে এবার ৩০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা মূল্যের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।