স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ মহামারির ফলে যেসব খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার মধ্যে হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম অন্যতম। কোভিড-১৯-এর কারণে এই সেক্টরে মোট মূল্য সংযোজনের প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। যদি মহামারি না থাকত সে ক্ষেত্রে এই পর্যটন খাত দেশের অর্থনীতিতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা অবদান রাখতে সক্ষম হতো। মহামারির কারণে এই অবদান ৯৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য কোভিড-১৯ প্যানডেমিক অ্যান্ড দ্য হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার কারণে উল্লিখিত খাতগুলো অর্থনীতিতে যে অবদান রাখতে পারত তার অনেক কম অবদান রেখেছে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে মূল্যসংযোজন ৪০ শতাংশ কম হয়েছে। তাছাড়া হোটেল এবং রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ এক-চতুর্থাংশ কম মূল্য সংযোজন করতে পেরেছে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে গতকাল রবিবার বিআইডিএস ভবনে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ। মূল গবেষণা উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ গবেষক মোহাম্মদ ইউনুস। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, এই সমীক্ষাটির মাধ্যমে কোভিডের কারণে এই সেক্টরে বিক্রয়, রাজস্ব হ্রাস, কর্মী ছাঁটাই এবং কর্মজীবীদের কর্মঘণ্টা হ্রাস এবং তাদের উপার্জনের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহর এবং কক্সবাজারে অবস্থিত ২০০টি হোটেল ও রিসোর্ট, ১৩৮টি ট্রাভেল এজেন্সি এবং ট্যুর অপারেটর, ২০০ রেস্তোরাঁ ও ৬৩টি এসএমই উদ্যোক্তা এবং কর্মচারীদের নিয়ে জরিপটি করা হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় ত্রৈ-মাসিকে (এপ্রিল-জুন) এই সেক্টরে বিক্রয় এবং আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পতন হোটেল এবং রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং ট্যুর অপারেটর এবং ট্রাভেল এজেন্ট, বিনোদন পার্কের জন্য প্রায় ৯৮ থেকে শতভাগ। তবে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাদের তৃতীয় ত্রৈ-মাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে বিক্রয় রাজস্বের উন্নতি হয়েছে; যা পরবর্তী সময়ে আরো বেড়েছে। প্রাক-মহামারি বছরের তুলনায় মহামারি বছরে হোটেল এবং রিসোর্ট দ্বারা নিয়োগকৃত কর্মচারীর গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল, কিন্তু ছাঁটাই তিন গুণ বেশি হয়েছে। অন্য দিকে ২০২০ সালে হোটেল এবং রিসোর্টে ৩৪ শতাংশ মজুরি বা বেতন হ্রাস হয়। ট্যুর অপারেটর ৩৪ শতাংশ এবং ট্রাভেল এজেন্টদের ২৬ শতাংশ মজুরি এবং বেতন গড় হ্রাস উল্লেখযোগ্য। তুলনামূলকভাবে এই সাব-সেক্টরে কর্মচারীদের জন্য সুবিধাগুলো প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই খাতগুলোর অধীনস্থ সংস্হাগুলো কোভিড-১৯ মহামারি কারণে ক্ষতি পুনরুদ্ধার করা সরকারি সহায়তা ছাড়া অসম্ভব। তাদের জন্য বাজেটে প্রণোদনার ব্যবস্থা এবং কম সুদের ঋণের ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়োছে।
বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ পর্যটন খাতে নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এক নয়। তার পরও পর্যটন খাত প্রবৃদ্ধিতে অনেক অবদান রাখে। করোনা সংকটে অন্যান্য খাতকে টেনে তুলতে সরকার যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে সেভাবে পর্যটন খাতে দেখা যায়নি। পর্যটন খাতেও সরকারের নজর দেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। বিআইডিএস-এর সুপারিশে বলা হয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বেসরকারি খাতকে তাদের ব্যবসা করার সুবিধার্থে পর্যটন স্থান এবং আশপাশের জনসাধারণের অবকাঠামোর উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন যাতে পর্যটক এবং সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা উভয়ই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা ও হয়রানি এড়াতে পারে। তাছাড়া কর্মচারীদের ন্যায্য মজুরি এবং বেতন সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।