রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

ভ্যাপসা গরমে তৃষ্ণা নিবারণে ও প্রশান্তির জন্য তরমুজের জুরি নেই। রসালো ফল হিসেবে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। রাঙ্গামাটির হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। তবে দাম একটু চড়া।

তরমুজ চাষ করা হয় মূলত পাহাড়ের ঢালে এবং কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে। পাহাড়ে তরমুজের অভাবনীয় উৎপাদনে চাষিরাও বেশ লাভবান হয়েছে। জেলার বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি থেকে উৎপাদিত এসব তরমুজ জেলা শহর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাঙ্গামাটিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে রাঙ্গামাটি জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। গড়ে ৪০ টন করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। জেলার মধ্যে লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদর উপজেলায় এবার তরমুজের আবাদ বেশি হয়েছে।

সরোজমিনে জেলা শহরের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে স্বল্প দামের তরমুজ কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় ও মাঝারি আকারের প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০- ৪৫০ টাকা, এবং ছোট আকারের তরমুজ ১৭০-২৫০ টাকায়। এককথায় ১০০ টাকার নিচে কোন তরমুজ নেই। তরমুজের আকার অনুযায়ী দাম বেশি হওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষ কিনতে পারছে না বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য তরমুজ কেন বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের দিনমজুর রশিদ আলম বলেন, বাজারে মৌসুমের নতুন ফল তরমুজ উঠেছে। দোকানে গিয়ে তরমুজের দাম শুনে কেনার ইচ্ছা চলে গেছে। চালের দামের থেকেও তরমুজের দাম বেশি। একটি তরমুজ কিনতে দেড়শ থেকে দুইশো টাকা লাগবে। সারা দিনে আয় যা হয়, তা দিয়ে চাল-ডাল কিনবো নাকি তরমুজ কিনে খাবো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারগুলো তরমুজে সয়লাব। তবে কেনা-বেচা কম। হাটে তরমুজ থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। স্থানীয় বনরূপা হাট বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, ২০০ তরমুজ আনছি ৪৩,৪০০ টাকা খরচ হয়ছে। ২৪০ টাকা প্রতি পিস কিনা, কিন্তু ক্রেতারা মোলাই ১৫০-১৭০ টাকা। তরমুজের আবাদ হয়ছে প্রচুর। তরমুজ চাষীরা ভালো দামও পাইছে। কিন্তু খুচরা বাজারে বেচাকেনা একবারে কম, ক্রেতা নেই।

স্থানীয় তরমুজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে যে দামে তরমুজ কেনা হয়েছে সেই দামে বিক্রি করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সামনে বৈসাবি উৎসব তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।আশা করছি তরমুজের বাজার জমে উঠবে।

বনরূপা বাজারে তরমুজ কিনতে আসা গৃহিণী বানাসা বেগম বলেন, তরমুজ কিনতে এসেছি। কিন্তু মৌসুমী ফল তরমুজের চড়া দাম। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের সামর্থের বাইরে তরমুজের দাম বর্তমানে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে বর্তমানে তরমুজের চাহিদা কম থাকলেও গরমের তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরমুজের চাহিদা বাজারে বাড়বে। এছাড়া সামনে পাহাড়ের সবচেয়ে আনন্দবহ বিজু, বৈসাবি উৎসব রয়েছে। ফলে কৃষক-ব্যবসায়ী সকলে লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।