মাসুম তালুকদার :
জীবন বাঁচাতে দেড় মাস ধরে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। শুধু তাই নয়, হাইকোর্টের ১০৮১/৯৮ নং মামলার স্থিতাবস্থা সংক্রান্ত নির্দেশ অমান্য করে পুরো জমিজমা টাকার বিনিময়ে জবর দখল করিয়ে দিচ্ছেন বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের। তার ভয়ে এখন বাড়ি যেতে পারছি না। এক একর জমি, একটি লবণ উৎপাদন মিল ও একটি চিংড়ির ঘের দখল করে রেখেছেন তার লোজন দিয়ে। একটি সংঘবন্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী তার(এমপি) ভাতিজা ছুট্টুর নেত্বেত্বে রয়েছে। সে আমাদের বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে চকোরিয়া পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকেই আমার ও আমার পরিবারের উপর নেমে আসে এমন নির্যাতন। যার নেপথ্যে রয়েছেন জাফর আলম এমপি। তার লোকজনের অত্যাচারে আমি ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছি। জীবন বাঁচাতে পরিবার নিয়ে গত দেড় মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এমন পরিস্থিতি হয়েছিল বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলেও। ওই সময় সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বর্তমানের আসামের শিলংয়ে থাকা সালাহ উদ্দিন আহমেদও একই ধরণের অত্যচার চালিয়েছিলেন। বিএনপির আমল বিধায় সেটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্ত যখন নিজের দল ক্ষমতায় তখন আমার উপর এ ধরণের নির্যাতন আমাকে মানসিকভাবে সত্যিই খুবই আহত করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন ও তার ২২ সহযোগির বিরুদ্ধে আমি পরবর্তীতে মামলা করেছিলাম। যার নং- জিআর-৫২/৭। বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন ও তার লোকজনের সাথে সখ্যতা ধরে রাখতেই বর্তমান আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি জাফর আলম এমন অত্যাচার শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই এমপি তার লোকজন দিয়ে আমার কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভায় এক একর জমি, কক্সবাজের একটি লবণ উৎপাদন ফ্যাক্টরী ও একটি চিংড়ি ঘের দখল করে নিয়েছে।
 
২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে তার ভাতিজা জিয়াবুল হক আওয়মী লীগ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। আমি ও আমার পবিারের সদস্যরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জয় করাতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করি। এর পর থেকেই এমপি আমার উপর এমন নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কক্সবাজার ও চকরিয়ার সর্বস্তরের মানুষ অবগত আছেন।

এর আগে বিএনপি জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে আমার পুরো পরিবার নির্যাতিত হলে অবশেষে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের তদন্ত সাপেক্ষে সার্বিক অবস্থা জানার পর প্রধানমন্ত্রী আমার পরিবারকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। বিএনপি জামাত নেতাকর্মীদের দখলে থাকা আমার জমিজমা উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ডিসিকে নির্দেশ দেন। এ সময় সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ারকৃত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ডিসিকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর কিছু দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। বর্তমানে আবার আগের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমপি জাফর আলম আমাকে আমার ছোটভাই সাদ্দাম হোসেন মিঠুকে মেরে ফেলার জন্য কয়েক দফা চেষ্টাও চালান। এহেন পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে আমি আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে মোজাফফর হোসেন পল্টুর মা আনোয়ার বেগম, স্ত্রী নিশাত পারভীন ও সাত বছর বয়সী ছেলে তানভীর হোসেন সানি এবং মামী সেতারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জাফর আলম এমপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে মোজাফফর হোসেন পল্টু সংবাদ সম্মেলনটি করতে পারেন। পল্টুর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।