ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সকল প্রকার নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এ জেলার উপজেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কাঠ ও টায়ার। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে জনসাধারণ। এসব অপতৎপরতা রোধে স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলাতিকে দায়ি করছে এলাকার সাধারণ ভুক্তভোগি মানুষ পরিবেশকর্মীরা।

সাতক্ষীরা জেলা ইট প্রস্তুতকারি মালিক সমিতির তথ্যমতে, জেলায় ইটভাটা রয়েছে ১৪০টি। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই আছে অর্ধশতাধিক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতনা নদী ও তালার কপোতাক্ষ নদীর দুই পাড়ে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর কোন আইনই এসব ভাটাগুলোতে মানা হয় না। এসব ইটভাটায় পেড়ানো হচ্ছে কয়লার বদলে কাঠ। জেলার অধিকাংশ ভাটায় জিকজাক কিলন পদ্ধতির ব্যবহার নেই। অধিকাংশ ভাটা পুরনো ফিড পদ্ধতির। এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলের মাঠ

কয়েকটি ইটভাটার মালিকের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে জানা গেলো, প্রতি বছর ইট প্রস্তুতের মৌসুমে কাঠ পোড়ানোর জন্য অনেক ব্যাখাই দাড় করান টইভাটা মালিকরা। কেউ কেউ বলছেন, কয়লার অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঠ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আবার অনেকে ভাটার মধ্যে মন মনন কাঠ রেখে বলছেন, তাদের নিজেদের হাওয়া ভাটায় কাঠ ব্যবহার করা যায় না। আবার অনেক ভাটা মালিক বলছেন, ইট পোড়ানোর প্রথম দফায় কাঠের ব্যবহার করতে হয়।

শহরতলির বিনেরপোতা এলাকার ইটভাটা মালিক প্রকৌশলী ফরিদ রহমান জানান, গত বছর কয়লার দাম ছিল প্রতি মন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এ বছর কয়লার দাম মন প্রতি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ। ইটের দাম গতবছর ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এবারও তাই। কয়লার অস্বাভাবিক এই দাম বৃদ্ধিতে ভাটা চালানো কঠিন।

ওই এলাকার আরেক ইটভাটা মালিক লিয়াকত সরদার বলেন, কাঠের কেজি আড়াই টাকা। আর কয়লার কেজি ১৮ টাকা। সে কারনে নিষিদ্ধ হলেও অনেকে বাধ্য হয়ে কাঠ ব্যবহার করছেনন। তিনি উন্নয়নের স্বার্থে এবং ইটভাটা শিল্পকে বাঁচতে সরকারের কাছে কয়লার দাম কমানোর াবি করেন

জেলাব্যাপী ইটভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং প্রশাসন যথাযথ তদারাকি না করায় উপকূলীয় লবণাক্ত এ জেলার পরিবেশ দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং মানুষ নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেÑ এমনটাই দাবি এখানকার পরিবেশিবাদীদের।

পরিবেশকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে কিছু বৈধ, কিছু অবৈধ। এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা খুবই ভয়ানক। আমরা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। তার উপর ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সেখানে যেন দেখার কেউ নেই। যেটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব জেলা প্রশাসননন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। বৈশি^ক মহামারী করোনাকালে আমরা শ্বাসকষ্টে ভুগছি। পরিবেশ-প্রতিব্শে যদি ভালো না রাখা যায় তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে মানুষের। পরিবেশ অধিদপ্তর যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, প্রশাসন যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে পরিবেশকর্মীদের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম, জনবল সংকটের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটা মালিকদের বিরু্েদ্ধ ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

তিনি আরও জানান, আমরা উদ্যোগ নেব। তবে আমাদের জনবল খুবই কম। ট্রান্সপোর্ট নেই। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যাও কম। তারপরেও আমরা ইভাটা মালিকদের নোটিশ করেছি। এ মসেই থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আসবে। তখন আমাদের পক্ষে ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থ গ্রহণ করা সহজ হবে।