বরিশাল প্রতিনিধি: ঝালকাঠিতে ‘এমভি অভিযান’ নামে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় লঞ্চের চালককে দায়ী করছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর যদি দ্রুত লঞ্চটিকে নদী তীরে নোঙর করা যেতো তবে এতো হতাহতের ঘটনা ঘটতো না। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পর প্রথমে লঞ্চটি তীরের দিকে নেয়া হলেও পরে আবার মাঝ নদীতে নিয়ে যায় চালক।
এক যাত্রী জানান, ‘নলছিটির পরপরই লঞ্চটিতে আগুন লাগে। তখন আগুনের তীব্রতা ছিলো না। যাত্রীরা লঞ্চটিকে তীরে নিতে স্টাফদের বললে চালক কিছুটা তীরে নিয়ে আবার লঞ্চটিকে নদীর মধ্যে নিয়ে আসেন। এ সময় আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু যারা সাতার জানেন না তারা লঞ্চেই থেকে যান এবং পুড়ে ছাই হতে হয়।
অপর এক যাত্রী বলেন, যারা ঝাঁপ দিতে পারেনি বা যারা সাঁতার জানেন না তারা পুড়েই অঙ্গার হয়ে গেছেন। যদি লঞ্চটিকে কোনোভাবে সঙ্গে সঙ্গে তীরে নেওয়া যেতো তাহলে এতো লোক মারা যেতো না। তিনি জানান, পুরো লঞ্চে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে কাউকে দেখা যায়নি। হয়তো তাদের আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত সরঞ্জামই ছিল না।
এদিকে ঘটনাস্থলে লঞ্চটি পরিদর্শনে এসে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চালকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তাতে চালকের অদক্ষ ছিল হয়তো। তবে পুরো ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এছাড়া যারা আহত নিহত হয়েছেন তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।
এছাড়া শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থাকায় আমি ঢাকায় বার্ন হাসপাতালে কথা বলে রেখেছি। বরিশালে যতটা সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ভোর থেকে নদীতে তল্লাশি করে লঞ্চের ৯ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এর মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু তিনজন করে জানিয়েছেন বরিশাল কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট আহম্মেদ অনাবিল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতদের নাম পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক বেল্লাল উদ্দিন তাদের প্রায় ১০টি ইউনিট কাজ করছে এখানে। এ পর্যন্ত তারা ৩৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেলা ২টা পর্যন্ত ৩৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তবে আগুনে দগ্ধ ৩০ জনের বেশিরভাগেরই পরিচয় জানা কঠিন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা।