সিলেটের রাতারগুল থেকে ৪ মাসে ৪০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায়
21, December, 2021, 4:30:9:PM
সিলেট ব্যুরো : সিলেটের জাফলং, লালাখাল ও বিছনাকান্দির মতো আরেকটি পর্যটন স্পট হলো রাতারগুল। এটি জলাবন হিসেবে দেশব্যাপি পরিচিত এবং পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। দেশের একমাত্র এ জলাবনটি সিলেট বন বিভাগের সারী রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে বন বিভাগের মালিকানাধীন অন্তত সংরক্ষিত ২ হাজার ৫শ একর জায়গা রয়েছে। রাতারগুল পর্যটন এলাকা থেকে সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদউদ্দিন আহমদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় চলতি বছরের গত ৪ মাসে বন বিভাগ পর্যটকদের নিকট থেকে প্রবেশ ফি এবং নৌকা ভাড়া থেকে অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। জানা গেছে, সরকারি গেজেটভুক্ত বন বিভাগের মালিকানাধীন রাতারগুল পর্যটন এলাকায় প্রবেশ ফি বাবদ প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটকদের নিকট হতে ভ্যাটসহ ৫৭ টাকা এবং নৌকা ভাড়া বাবদ ১শ’২৫ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়।
সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: সাদউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, চলিত বছরের গত ৪ মাসে সরকার রাতারগুল পর্যটন এলাকা থেকে অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাতারগুল পর্যটন এলাকা পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় জনসাধারণের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধায় যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ গাড়ি পার্কি-স্থান এবং পর্যটকদের জন্য উন্নত মানের ওয়াসরুম, যাত্রী ছাউনী ও বিশ্রামের জন্য গেস্ট হাউজ নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাতারগুল থেকে সরকারি রাজস্ব আদায়ের ৫০% অর্থ স্থানীয় বন নির্ভরশীল হতদরিদ্র জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
রাতারগুলে বন বিভাগের অন্তত ২ হাজার ৫শ’ একর সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে ৫শ’ ৪ একর সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলারবন গঠিত। এখানে অন্তত ২শ’ একর জায়গা বেদখল ছিল। বিভিন্ন সময়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ১শ’ ৮১ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে এসব জায়গায় টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল প্রকল্প) নামে ৩ লক্ষ মূর্তার চারা রোপণ করে বাগান সৃজন করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত এসব জায়গায় সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের হামলার মুখে পড়তে হয়েছে সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: সাদউদ্দিন আহমদসহ ৩জন কর্মকর্তাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা অন্তত ১৫দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সিলেট বনবিভাগ সারী রেঞ্জের আওতাধীন ৬টি বনবিট অফিস রয়েছে। ২০১৭ সালে মো: সাদউদ্দিন আহমদ সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর জাফলং বন বিভাগের মালিকানাধীন বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধার করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
চলিত বছরে জাফলং-তামাবিল এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৫ হেক্টর জায়গা উদ্ধার করা হয় । ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাফলং ,তামাবিল, কানাইজুড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫২ হেক্টর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। তামাবিল ও কানাইজুড়ী এলাকায় ভারতীয় পাথর ডাম্পিং উচ্ছেদ করে আরো ১৭ হেক্টর জায়গা উদ্ধার করা হয়। তামাবিল এলাকার কিছু পাথর ব্যবসায়ী তৎকালীন তামাবিল-জাফলং বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন থেকে সরকারের মূল্যবান এসব জায়গার উপর পাথর ডাম্পিং ও জবর দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছিলেন। সিলেট বন বিভাগ গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারের অন্তত ৩০ কোটি টাকা মূল্যের এসব জায়গা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। চলিত বছরে উচ্ছেদ হওয়া এসব জায়গার মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট বনবিটের আওতায় আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা ও তিতগুলি হাওরে জবর দখলে থাকা ৩৫ হেক্টর জমি উদ্ধার করে সেখানে মূর্তা বাগান সৃজন করা হয়েছে। মূর্তা বাগান বর্তমানে একটি সফল বাগানে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্মীনগর বনবিটের অধীনে নিয়াগুল হাওর, পরকুড়ি বিলের পার ও সতির হাওর এলাকা থেকে আরো ১২৫ হেক্টর জায়গা উদ্ধার করা হয়। এখানেও মূর্তা বাগান সৃজন করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চলে আসা ৩৫টি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে। সারী বিটের অধীনে জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের বাউরভাগ উত্তর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৪০ হেক্টর জায়গা জুড়ে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চারিকাটা ইউনিয়নে সংরক্ষিত বনভূমিতে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯৩ হেক্টর জায়গায় নতুন বাগন সৃজন করা হয়েছে। কানাইঘাট বনবিটের অধীনে দেওয়া টিলা নামক এলাকায় ৩৭ হেক্টর জায়গা উচ্ছেদ করে এখানেও সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: সাদউদ্দিন আহমদ বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিগত ৪ বছরে অন্তত ৭শ’ একর সংরক্ষিত বনভূমি জবর দখল থেকে মুক্ত করে বনায়ন কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছি। গত ৪ বছরে সিলেট বনবিভাগ সারী রেঞ্জের অধীনে অন্তত ২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে। তিনি জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তাদের সহযোগিতায় বনবিভাগের সংরক্ষিত জায়গা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এসব জায়গায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সারী রেঞ্জ’র অধীনে ৬টি বনবিটে লোকবল সংকট থাকায় অনেক সময় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে। বনবিভাগ সারী রেঞ্জ’র অধীনে তিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বৃক্ষের চারা বিতরণ এবং সড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি এলাকায় বৃক্ষরোপণ করে দেশকে সবুজায়নে উন্নত করে এগিয়ে নিতে।