রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :
কাপ্তাই কৃত্রিম হৃদ তৈরীর কারণে রাঙ্গামাটি মূল শহর থেকে ৬০ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তবে লাঘব হচ্ছে তাদের দুর্ভোগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকায় নবনির্মিত ‘ণ’ আকৃতির একটি সেতু তাদেরকে সংযোগ করছে শহরের মূল ভূখণ্ডের সাথে।

রাঙ্গামাটি শহরের পুরান পাড়া এলাকা। রাঙামাটির সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা বলা হয়ে থাকে জুলুক্যা ও পুরানপাড়া নামে এই দুই পাড়ার  বাসিন্দাদের। যারা ৬০ বছর আগে ৭’শ ২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদে নিজেদের বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নেয় রাঙ্গামাটি শহরের পাশের পাহাড়ের দ্বীপে।

মূল শহর থেকে তাকালে দ্বীপটি চোখে পড়ে। পাড়া দুটি বর্তমান রাঙামাটি শহরের খুব কাছাকাছি হলেও এতদিন সড়ক যোগাযোগ না থাকায় একরকম বিচ্ছিন্ন ছিলেন এখানকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ ৬০ বছর পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুর্দশা কাটছে তাদের। দৃষ্টিনন্দন ‘ণ’  আকৃতির নবনির্মিত সেতুটি এই পাড়া তিনটিকে যুক্ত করছে শহরের মূল ভূখণ্ডের সাথে। প্রায় আট বছরের নির্মাণ কাজ শেষে সংযোগ সড়ক স্থাপন শেষ পর্যায়ে। বহু প্রতীক্ষিত কাঙ্খিত স্বপ্নের সেতুটি নির্মিত হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী।

একটা সময় জরুরি রোগী নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো এই পাড়ার বাসিন্দাদের। ঝুঁকি নিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেত। এখন ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় যাতায়াতের দুর্দশা থেকে মুক্তি মিলেছে এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, একটা রোগী নিতে আমাদের অনেক কষ্ট হতো। দুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিস আসতে পারতো না। এই সেতুটি হাওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। সেতুটি  হওয়ার কারণে আমরা উপকৃত হয়েছি।

২০১৩ সালের রাঙ্গামাটিতে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা প্রতিকূলতার পর এটির কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুটি নির্মাণ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। খুলে দেওয়া হবে শীঘ্রই।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন রিজার্ভ বাজার থেকে পুরান পাড়া, জুলুক্যা পাহাড় সংযোগ সেতুটির নাম মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ তালুকদারের নামে নামকরণের দাবি স্থানীয়দের।

সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা। তিনি বলেন, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। তারপর এই সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। ১৭ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮৪.০৮ মিটার, প্রস্থ ৪.৫০ মিটার। সেতুটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে পেরে আমাদের মধ্যে একটা ভালোলাগার অনুভুতিও কাজ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতেই শীঘ্রই সেতুটি উদ্বোধনের দিন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সেতুটি যেহেতু রাঙামাটির স্বপ্নের সেতু। তাই প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধনের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্মতি চাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে তারিখ নির্ধারিত হলে আমরা সেটা অচিরেই উদ্বোধন করতে পারবো।

যোগাযোগ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এই সেতু অবকাশ যাপনের জন্য হয়ে উঠেছে অন্যরকম স্থান। বিকেল হলেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভীড় জমান বিনোদন প্রেমিরা।

সম্প্রতি এই সেতুটি সরেজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায় কাপ্তাই রাস্তার বুক ছিড়ে যাওয়া সেতুটির উভয় পাশ যেন অপরূপ সৌন্দর্যের আঁধার। একদিকে শুভলং ভ্যালি এবং অন্যদিকে ফুরোমন পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সেতুটিকে দিয়েছে যেন ভিন্ন এক মাত্রা। নির্মাণাধীন সেতুরটি থেকে পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।