চট্টগ্রাম : অনেক জল্পনা-কল্পনা আর দীর্ঘদিন জনবল সংকটে ভুগতে থাকা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) অবশেষে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে চারটি নতুন থানা। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি তথা পুলিশের সাথে জনগণের দূরত্ব ঠেকাতে বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে নতুন চারটি থানা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অন্যতম। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে নতুন করে এই চারটি থানা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সিএমপি’র দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে নিশ্চিত করেছে।
নতুন থানাগুলো হলো- কুয়াইশ, ফতেয়াবাদ, ভাটিয়ারী ও শিকলবাহা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, বাণিজ্যিক রাজধানিখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জনবল সংকটের কারণে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। চট্টগ্রাম নগরীর আয়তন ১৫২ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশী। আর নগরীতে ৫০ লাখেরও বেশী মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৭৯ জন পুলিশ। হিসেব অনুযায়ি প্রায় ২৫ হাজার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় গড়ে ৩ জন পুলিশের উপর ন্যস্ত।
সচেতন মহলের মতে, ক্রমান্বয়ে দেশ সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে। যে কোনো সময় ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি। কারণ মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সরকাররী দল এবং বিরোধীদলগুলো। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি এই প্রস্তুতিতে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ কোভিড-১৯ করোনার মহাদুর্যোগের পর দীর্ঘ দেড় বছর অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ফের চাঙ্গা হতে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রায় এক বছর পর গণভবণে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার আপডেট করতে উপ-কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম-জাতীয় স্থায়ী কমিটি ধারাবাহিক বৈঠক করে কর্মকৌশল ঠিক করছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে গ্রহণযোগ্য ইসির দাবিতে তাদের মাঠে নামার পরিকল্পনা আছে এবং বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এমনটিও পরিস্কার হচ্ছে। দু-দলের পাল্টাপাল্টি প্রস্তুতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে উত্তেজনা ছড়াবে এমন আশঙ্কাও থেকেই যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই জাতীয় পাটিও। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার কথা বলছে। এছাড়া জামিনে বেরিয়ে আসছে অনেক সন্ত্রাসী, বাড়ছে মাদক ব্যবসা খুন-খারাবিসহ নানা অপরাধ। সরকারের শেষ সময়ে পরিস্থিতি আরো বেশী ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে এমন আশংকা খোদ আইন-শৃংখলা বাহিনীরও। এ পরিস্থিতিতে চারটি থানা বাড়ানো এবং পুলিশের জনবল বাড়ানো প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল। থানাগুলো হচ্ছে-আকবর শাহ, সদরঘাট, চকবাজার এবং ইপিজেড।
জানা যায়, ১৯৭৮ সালে ৬টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর আরো ৬টি থানা যুক্ত হয়। এরপর ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর নতুন চারটি থানা স্থাপন এবং এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০০টি নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর সিএমপি’র ১২টি থানা থেকে চারটি থানা বেড়ে ১৬টি থানায় উন্নিত হয়। বর্তমানে এই ১৬টি থানা নিয়ে গঠিত সিএমপি’র লোকবল সংকট, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যানবাহন স্বল্পতাসহ নানা কারণে পুলিশের পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ তথা স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাত-দিন অবিরাম পালাক্রমে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে পুলিশ অনেকটা শারিরীক-মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে লোকবল সঙ্কটের কারণে তাদের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ায়, চট্টগ্রামে নতুন আরো চারটি থানা স্থাপণের উদ্যোগ নেয় সিএমপি। নতুন আরো চারটি থানা চালু হলে সিএমপি’র মোট থানা হবে ২০টি। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের সাংসদ আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদক সাহেনা আক্তারকে বলেন, আমার সংসদীয় আসনের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ড অনেক বড় এলাকা। থানা দূরে হওয়ায় কোনো ঘটনা ঘটলে এসব এলাকার লোকজনের পুলিশি সেবা পেতে দেরি হয়। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে চট্টগ্রামে নতুন চারটি থানা বাড়বে। এতে করে সাধারণ মানুষ পুলিশী সেবা পেতে সহজ হবে। সিএমপি’র একটি দয়িত্বশীল সূত্র মতে, নগরীতে মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে নানা অপরাধও। তাই আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং পুলিশি সেবা বাড়ানোর জন্য সিএমপি’র পক্ষথেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।