আইনী জটিলতায় কংকাল সংরক্ষণ ও গবেষণায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না
31, August, 2021, 7:14:37:PM
কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : কুয়াকাটা সৈকত একের পর এক ভেসে আসছে মৃত ডলফিন, তিমিসহ নানা সামুদ্রিক প্রাণী। হঠাৎ করেই গত দু’বছর ধরে নিরীহ এসব জলজ প্রাণীর মৃত ভেসে আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পরিবেশবাদীসহ জীব-বৈচিত্র গবেষকরা।
২০২০ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মৃত ভেসে আসে ক্লামবার্ড, ইরাবতি, পারকায়েস, শুশুকসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির ৬ থেকে ১০ফুট লম্বা প্রায় ৩০টি ডলফিন। মৃত ভেসে আসে ৪৫ ফুট লম্বা বেলিন প্রজাতির ২টি তিমি। শরীরে আঘাত নিয়ে সৈকতে জীবিত ভেসে আসে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। মুখে জাল জড়ানো এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে এসব প্রাণী কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এসেছে।
স্থানীয়সহ মৎস্য ও বন বিভাগের ধারনা, সমুদ্রে মাছ শিকারী জেলেদের জালে আটকে কিংবা জলযানের প্রপেলারে আঘাতে এসব প্রাণী মারা গেছে। আইনী জটিলতায় এসব মৃত প্রাণীর কংকাল সংরক্ষণ করা যাচ্ছেনা। ব্যবহার করা যাচ্ছেনা গবেষণার কাজে। ফলে মৃত এসব প্রাণীর দুর্ঘন্ধ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ব্লুগার্ড কিংবা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্যরা মাটিচাপা দিচ্ছে।
পরিবেশ বান্ধব, সমুদ্রের বন্ধুপ্রাণীদের রক্ষায় সরকারী উদ্যোগের দাবী জানিয়ে ইতোমধ্যে সাংবাদ সম্মেলনসহ মানববন্ধন করেছে কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্যসহ জীব-বৈচিত্র রক্ষায় জেলেদের সচেতনতায় সামাজিক উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা। একই দাবী কুয়াকাটায় আগত পর্যটকসহ পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
জেলে আং রহিম জানান, অগভীর সাগরে গেলেই দেখা মিলছে ডলফিনের। যা কয়েক দশকে দেখা যায়নি। লকডাউনকালীন সময়ে কোন জলযানের চলাচল না থাকায় ডলফিন উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে।
জেলে ফরিদ জানান, ফিশিং ট্রলারের আশেপাশেই এরা মাছ খাবার জন্য ঘুরে বেড়ায়। ফলে অনেক সময় ট্রলারের প্রপেলর বা পাখার আঘাতে মারা যায়। অনেক সময় জালেও আটকে যায়। তখন জাল কেটে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
ওয়ার্ল্ড ফিসের জীববৈচিত্র গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, জালে আটক প্রাণীকে আঘাত না করে দ্রুত জীবিত অবমুক্ত করে দিতে হবে। পানির দুষণ রোধ, ছেড়া জাল না ফেলার মাধ্যমে নদী-সমুদ্রের জলজ প্রাণীকে রক্ষা করতে না পারলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র। তিনি আরো বলেন, পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ইকো ব্যালেন্সের কোন বিকল্প নেই।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, সামুদ্রিক প্রাণীদের মৃতের কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। জেলেসহ স্থানীয়দের সমুদ্রের জলজ সম্পদ সংরক্ষণে প্রচার-প্রচারনা, প্রশিক্ষণ, উদ্ভুদ্ধকরণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, সৈকতে ভেসে আসা মৃত প্রাণীদের সংরক্ষণ, গবেষণা এবং কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের প্রদর্শনের জন্য যাদুঘর র্নিমানের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।