দুলাল কৃষ্ণ নন্দী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :
সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ভেড়ীবাঁধের বাহিরে সৈকত সংলগ্ন সরকারি জমিতে একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা। ভূমি প্রশাসন নিষেধ করার পরও এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। কোন ভাবেই অবৈধ দখল কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না।

আইনি জটিলতার অজুহাতে ভূমি প্রশাসন এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পারছে না বলে জানান স্থানীয় ভূমি কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দখল এবং নির্মাণ কাজ চালিয়ে আসছে ওই চক্রটি। আবার কেউ কেউ এসব জমি কোটি টাকায় বিক্রি করেও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি জমি দখল দুষণের এমন দৃশ্য দেখে হতবাক পরিবেশবিদরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সমুদ্র সৈকত এলাকায় সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশ আইনের বিপরীত। এভাবে দখল দুষণ চলতে থাকলে সৈকত এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। তাই এখনই দখল রোধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে দাবী করেন তিনি।

জানা গেছে, কুয়াকাটা ভেড়ীবাঁধের বাহিরে সমুদ্র সংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মান কাজ করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনার পরও সরকারি জমি দখল এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলে আসছে একটি চক্র। গত কয়েকদিন ধরে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় সরদার মার্কেট কর্তৃপক্ষ, সানরাইজ হোটেল ও বামনা হোটেল কর্তৃপক্ষ পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণ করে আসছে। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মান কাজ মোখিকভাবে বন্ধ করলেও দখলদাররা রাতের আঁধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সৈকতের বালিয়ারিতে পাকা ভবন ও টং ঘর নির্মাণ করছে।

স্থানীয়রা জানান, ভেড়ীবাঁধের বাইরে এসব সরকারি জমি গত কয়েক বছর আগেও পতিত ছিলো। ভূমি অফিসের উদাসীনতার সুযোগে এসব পতিত জমিতে ভুঞা মালিকানার দাবি নিয়ে দখলদাররা গড়ে তুলেছে আবাসিক হোটেল সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব অবৈধ দখলদারদের বিষয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উপজেলা ভূমি প্রশাসনকে অনুরোধ জানালেও উপজেলা ভূমি কর্তৃপক্ষ অদ্যবধি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধুমাত্র মৌখিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রয়েছে ভূমি প্রশাসনের কার্যক্রম।

সানরাইজ হোটেলের মালিক এ এম শাহজালাল  দৈনিক স্বাধীন বাংলাকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধীয় জমিতে ঘর-দুয়ার নির্মাণ, সংস্কার ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবেন তিনি। সেখানে সরকার পক্ষ কোনোপ্রকার বাঁধা প্রদান করতে পারবে না। আদালতের এমন রায় নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে অথচ সানরাইজ কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন আধাপাকা টিনের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনও এসব বিষয় অবগত আছেন বলে তিনি দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি ) জগৎবন্ধু মন্ডল স্বাধীন বাংলাকে জানান, সানরাইজ কর্তৃপক্ষ সেমি পাকা ঘর তুলছে শুনে তহসিলদারকে পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নতুন কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এদিকে বর্তমান কুয়াকাটা পৌর মেয়র মোঃ আনোয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, কয়েকদিন আগেই তিনি জিরো পয়েন্ট এবং সরদার মার্কেট সহ বিভিন্ন টং ঘরের কর্তৃপক্ষকে  এসব স্থাপনা বন্ধ করার জন্য নোটিশ দিয়েছেন।