সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের বহুল আলোচিত নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। গতকাল বুধবার রাতে জরুরি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবরে পদত্যাগপত্র পাঠান।
জামানের পদত্যাগ নিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। দলের অভ্যন্তরেও বেশ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। জামানের অনুসারী বেশ কয়েকশ নেতা পদত্যাগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার রাতে সিলেট নগরীর মিরাবাজারের একটি অফিসে এ প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ও ঋণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। এ ছাড়া আর উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মওদুদুল হক, আব্দুর রকিব তুহিন, প্রভাষক রায়হান উদ্দিন, ফয়েজ আহমদ দৌলত প্রমুখ।
পদত্যাগপত্রে জামান বলেন, আমি ১৯৮৫ সাল থেকে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে বিএনপিতে যুক্ত হই। বিএনপির দুর্দিনে এই দলকে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনের সোনালি সময়ে সাধ্যমতো সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি। সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছি। আমি কখনই হালুয়া-রুটির ভাগিদার হইনি। কিংবা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।
দলের মহাসচিবকে উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি আরও লেখেন— আপনার মতো বিজ্ঞ মানুষের স্মরণশক্তি যদি মহান আল্লাহ সঠিক রাখেন, তা হলে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে আমার ও আমার সহযোদ্ধাদের ভূমিকা আপনার মনে থাকার কথা।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো— ১৭ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমার জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষিত হলো আমার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে।
সর্বোপরি যেসব সহযোদ্ধা আন্দোলন করতে গিয়ে জীবনবাজি রেখেছিল, গুলিবিদ্ধ হয়েছিল— এমনকি সমাজ ও সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, তাদের চরমভাবে উপেক্ষা করে উপহাসের পাত্রে পরিণত করা হলো।
মহাসচিব বরাবরে লেখা ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আজকে অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে জানতে ইচ্ছে করে আপনার দলে নেতৃত্ব পেতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কি? যারা দেশ ও দলকে ভালোবাসে, জীবনবাজি রাখে, দুর্দিনে যারা বিশ্বস্ত থাকে, বন্দুক-বেয়নেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, তাদের পাওয়া উচিত, নাকি যারা লবিং-তদবির অথবা বিশেষ ব্যবস্থায় সব কিছু হাসিল করে তাদের পাওয়া উচিত?
এর আগে মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। দুই কমিটির প্রত্যেকটিতে ৬১ জন করে নেতা স্থান পেয়েছেন।
কমিটির জেলা শাখায় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল আহাদ খান জামাল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা দেওয়ান জাকির হোসেন খান। এ ছাড়া মহানগরের আহ্বায়ক হিসেবে আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আজিজুল হোসেন আজিজ।
অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও তার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে নিজের জেলা এবং মহানগর কমিটি ঘোষণা করায় অভিমানে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে দলটির স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।