জকিগঞ্জ প্রতিনিধি : করোনা সংক্রমণ রুখতে সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় একান্ত প্রয়োজনে বাইর বের হওয়া মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। তবে লকডাউনেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দশসিটা যানবাহন। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেলে গাড়ি থামলেও অনুপস্থিতিতে বিরামহীন ঘুরে তিন চাকা। সিলেটের জকিগঞ্জে নিত্যদিনে এমনই চিত্র। দশসিটের যান বলে লোকমুখ ‘দশ সিটা’ নামেই এর পরিচয়।
পুরো উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় এক হাজারের অধিক রয়েছে এরকম যান। চালকের পাশে ২জন, মাঝখানে ৪জন এবং পেছনে আরো ৪জন নিয়ে মোট দশ সিট। কিন্তু অভ্যন্তরে জায়গা এতটাই কম যে, গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হয়। এমন বাস্তবতা উপেক্ষা করে চালকের পাশে বাড়তি যাত্রী পরিবহনসহ দাঁড় করিয়েও বহন করা হয় একাধিক যাত্রী। এতেও পোহাতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে অবৈধ কাগজ ও নাম্বারবিহীন এই গাড়িগুলো অনায়াসে চলছে সড়কে। চালকদের বৈধ লাইসেন্স তো নেইই, বরং রিক্সা-টমটমের ড্রাইভিং ছেড়ে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই দশ সিটের চালক হতে যেন তুমুল প্রতিযোগিতা।
১৪ বছর বয়সী চালক ফাহিম আহমদ জানান- ‘আগে টমটম ছালাইতাম। তিন-চাইর মাস আগে বিয়াবাইল গাঙর পারো এখদঘণ্টা পেকটিস খরছি, এখন ফুরাউ ছালাইতাম ফারি।’
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায় দশসিটা গাড়ির নাম অগ্রভাগে। প্রত্যেক মাসেই উপজেলার একাধিক জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক যাত্রীই শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চালকের অদক্ষতা এবং অসাবধানতাই দায়ী।
এদিকে, করোনার প্রতিকূল সময়েও বাড়তি ভাড়া দাবী করায় যাত্রীদের মাঝে তৈরী হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। স্বাভাবিক সময়ে অন্যান্য যানবাহন থেকে বেশি ভাড়া নিলেও করোনাকালে ভাড়া আরো বৃদ্ধি করায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এম এ আজিজ লিখেন, আটগ্রাম থেকে জকিগঞ্জ ভাড়া ২৫টাকা নিল। ভাড়া বেশি বলায় চালক বলে কমিটি বলেছে এই ভাড়া নেয়ার জন্য। রিয়াদ হুসেন জানান, কালিগঞ্জ থেকে আটগ্রামের ভাড়া দাবী করে ২০ টাকা।
এ বিষয়ে সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন আটগ্রাম শাখার দায়িত্বশীল কামরুল ইসলাম জানান, দশসিটার আলাদা সংগঠন নেই। আমাদের বিভিন্ন শাখার অধীনে তারা গাড়ি চালাচ্ছে। তবে করোনার সময় বাড়তি ভাড়া নেয়া সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি আমাদের পক্ষ থেকে।
লেগুনা মালিক সমিতি কালিগঞ্জ শাখার ম্যানেজার জাকির হুসেন জানান, আমাদের অধীনে প্রায় ২৫টি দশসিটা রয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর কোন নির্দেশনা দেয়া নেই। সড়কে গাড়ি কম থাকায় হয়তো কেউ বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার জানান- লকডাউন চলাকালে গাড়ি চলাচল তো নিষিদ্ধ। আর ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কাশেম খান জানান- কাগজবিহীন গাড়ি চোখে পড়লে আমরা সড়ক পরিবহন আইনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যাত্রীদের অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।