দেলোয়ার হোসেন, শাবি প্রবিনিধি : কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের পাশে দাঁড়িয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার নমূণা সংগ্রহ করা না হলেও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এরই মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকেই। এদের মধ্যে অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিন্তু নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, সিলেট অঞ্চল জুড়েই ঠেকানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণের হার। অনেকটা লাফিয়েই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের মধ্যদিনে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির লাগাম টানা জরুরী।
কোভিড-১৯ কালীন সময়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দু’টি এ্যাম্বুলেন্স দিবারাত্রি চব্বিশ ঘন্টা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের লোকজনদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকায়নের ফলে একটি নর্মাল এ্যাম্বুলেন্স ও একটি শীততাপনিয়ন্ত্রীত এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন মেডিকেল সেন্টারটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ কবীর হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, গত একমাসে এ্যাম্বুলেন্সে সেবা গ্রহণের হার প্রায় ২৭ শতাংশ। এদের কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত, কেউ এই অবস্থা থেক উত্তোরীত, কেউ সিজনাল ডিজেজ আবার কেউ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে জরুরী সেবা পেতে এ্যাম্বুলেন্সের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। বর্তমানে দুইজন চালক এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে আসছেন তাদের একজন রানা চৌধুরী ও অন্যজন ধীরেন বাবু।
সম্প্রতি এম্বুলেন্স চালকদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে তাদের কাছে একটি হটলাইন নাম্বার দেয়া হয়েছে। যাতে ফোন দেয়া মাত্র যেকোনো একজন চালক রোগীর দরজায় হাজির হতে পারে। এছাড়া লকডাউন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও একাডেমীক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার, নার্স সহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কখনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার, কখনো ডরমেটরি, কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা আবার কখনো ছাত্রদের মেস; যেখানে ডাক পড়ে যেখানেই ছুটে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স। সম্প্রতি এ্যাম্বুলেন্স সেবা নেয়াদের মধ্যে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশ্রাফ কামাল আরিফ জানান, লকডাউনে একদিন রাতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল যাবার দরকার হয়ে পড়ে। তখন মেস থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। শরীর এতটাই দুর্বল ছিল যে হাটতেই পারছিলাম না। এমতাবস্থায় মেডিকেল প্রশাসক স্যারকে ফোন দিলে হাসপাতাল যাবার জন্য তিনি এ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ওইরাতে এম্বুলেন্স না এলে খুব বড় ধরণের বিপদে পড়তে হতো। তবে সাথে সাথে এ্যাম্বুলেন্সের এমন রেস্পন্স সত্যিই প্রশংসনীয়।
এর আগে গত ২৭ জুন রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে অত্যাধুনিক রূপে সজ্জিত মেডিকেল সেন্টারের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। উপাচার্য বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করতে যে সকল সুবিধা দেয়া দরকার তা আমরা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা শতভাগ বিরাজমান। সামনের দিনগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। মেডিকেল প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. কবীর হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ভালো মানের সেবা দিতে চাই। সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ে মেডিকেল সেন্টারের হটলাইন সেবা চালু করা হবে। যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলে ২৪ ঘণ্টা সেবা নিতে পারবেন। আমাদের এ্যাম্বুলেন্স দিনরাত ২৪ঘন্টা সেবা দিতে প্রস্তুত আছে। আমাদের সক্ষমতা থাকা সত্বে মেডিকেল সেবা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে শতভাগ সেবা দিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাব আমরা।