মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভা দুই যুগের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাগজে কলমে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির ঘোষণা করা হলেও নাগরিক সুবিধায় নেই তেমন কোন অগ্রগতি। দীর্ঘদিন ধরে পৌরবাসী নানাবিধ সমস্যায় ভুগলেও তার মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সংকট ছিল অন্যতম। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে টিকিকাটার সূর্যমনি বধ্যভূমি সংলগ্ন পানির প্রকল্পের কাজে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরে পৌরবাসী যখন সুপেয় পানি পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে ছিল তখন এ বেপরোয়া পানির বিল তাদের জন্য হয়ে ওঠে অসহনীয় এক বোঝা।
হাঁকডাক দিয়ে ৬ মাস ধরে পরীক্ষামূলক পানি সরবরাহের কাজ শুরু করেন। যা দিনের নির্ধারিত সামান্য কিছু সময় ধরে কিছু সংখ্যক পরিবারের মধ্যে তা চলমান রয়েছে। পৌর নাগরিকের একটি বিরাট অংশ এ পর্যন্ত বাসা বাড়িতে মিটার স্থাপন না করে পানি সংযোগের বাইরে রয়েছেন। পরীক্ষামূলক সেবা প্রদানের আগে শহীদ মিনারে উপস্থিত জনতার সামনে পৌর মেয়র প্রতিশ্রুতি দেন যে, শতভাগ পানির পরিশুদ্ধতা না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং পরিপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কাজের শুভ উদ্ভোধন করবেন। এদিকে উদ্ভোধনী কার্যক্রমের আগেই গ্রাহকদের বাসা-বাড়িতে পানির কাল্পনিক বিল যাচ্ছে।
পরিশুদ্ধ পানি শহরে বসবাসকারী প্রথম শ্রেনির কিছু পরিবার ব্যবহার করতে পারলেও অন্যান্য এলাকায় এর ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। অধিকাংশ বাসা বাড়িতে পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকায় পানির অপচয় রোধে সংযোগ পাইপের মাথাগুলো আগুনে পুড়িয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। বিকল অবস্থায় পড়ে থাকা ওই সংযোগ থেকে এক ফোটা পানি ব্যবহার না করেও তাদের হাতে মোটা অংকের টাকার বিলের কাগজ পৌর কর্তৃপক্ষ ধরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে গোটা পৌরবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
রাজধানী শহর ঢাকায় পানির বিল প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ২০ পয়সা, বরিশাল বিভাগের প্রায় প্রত্যেকটি পৌরসভায় আবাসিক ইউনিট চার্জ ১৫ টাকা। এদিকে মঠবাড়িয়ায় আবাসিক ৩৫ টাকা ও বাণিজ্যিক ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার সামঞ্জস্যতা পৌরবাসী ভরদুপুরে আকস্মিক বজ্রপাতের সাথে তুলনা করেছেন। এ ভুতুড়ে ও কাল্পনিক বিল তারা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। পৌরবাসী বলেন, এ বিল বাতিলে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প নেই।
৪নং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস নিজের চিন্তা-চেতনায় ঘাপটি মেরে আছে, কিভাবে পৌরসভার অর্থে নিজের উন্নয়ন করা যায়। নামেমাত্র প্রথম শ্রেনির পৌরসভা হলেও একটি অভিভাবকহীন শহরের বাসিন্দা আমরা। কোথাও অভিযোগের যেন স্থান নেই। কোন সমস্যার কথা উত্থাপন করলে সাথে সাথে মিষ্টি কথার ফুলঝুরিতে ভিজিয়ে দিতে তিনি শতভাগ সক্ষমতা অর্জন করেছেন। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার ফসল ছিল কিছু না পেলেও অন্তত একটু পানি পেতে যাচ্ছি, তা না পাওয়ার আগেই আমার বাসার পানির বিল নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার টাকা, যা আমার পরিবারকে হতবাক করে দিয়েছে। জানামতে বিশ্বের কোন শহরে এত চড়া মূল্যের পানির বিল আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এ রাক্ষুসে পানির বিল থেকে অতিদ্রুত পৌরবাসী মুক্তি চায়।
১নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার নাজমুল হাসান কামাল মুন্সি বলেন, এ মনগড়া নাটকীয় পানির বিলের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পংকজ সাওজাল বলেন, পার্শ্ববর্তী জেলার পৌরসভার তুলনায় আমাদের পৌরসভার পানির বিল দ্বিগুনেরও বেশি ধরা হয়েছে। তাছাড়া এতে নি¤œ মানের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। যা বিষ্ফোরিত হয়ে অপরিশোধিত পানি রাস্তা বা ড্রেনকে প্রতিনিয়ত পরিশোধন করছে। পানির লোক নিয়োগ দেয়া হলেও এগুলো দেখভাল করার কোন লোক নেই। আর সে পানি ব্যবহার না করে তার মাশুল গুনতে হচ্ছে জনগণকে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফজলুল হক মনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন গোটা দেশব্যাপী গণমানুষের উন্নয়নের জন্য মহানকর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় তিনি মঠবাড়িয়া পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত বিশুদ্ধ পানি সংকট উত্তরণের জন্য এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করে দেন। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পৌরবাসীরা পানির বিল কাগজ ধরিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল যে, মৃত্যুর পূর্বে অন্তত এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করে মরতে পারবো। অথচ পৌরবাসী সে পানির সামান্য স্পর্শ না পেলেও হাজার হাজার টাকার বিল ভাউচার কর্মহীন করোনার এ দুর্যোগের মধ্যে তাদেরকে চরম দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন। আর সে সারিতে আমিও যুক্ত হয়েছি। আমার দৃষ্টিতে এ পানি পৌরবাসীর সেবার পরিবর্তে তাদের রক্ত শোষন করার একমাত্র হাতিয়ার। যে কোন মূল্যে আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর বলেন, সাপ্লাইয়ের পানি থেকে এক ফোটা পানি ব্যবহার করিনি। অথচ ৮৮৩ ইউনিট পানির বিল কাগজে ৫৮ হাজার ৮ শত টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। যা ঢাকা ওয়াসার তুলনায় চারগুন। চলমান পানি সরবরাহতো পরীক্ষামূলক কার্যক্রম, এর শতভাগ পরিশুদ্ধতা এখনও হয়নি। এ মুহুর্তে গ্রাহকদের বিল নির্ধারণ করার কোন যুক্তিকতা নেই। তাছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের সাথে এ পানি বিশুদ্ধ করণের অতিরিক্ত অর্থকে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি এ প্রহশনের পানি বিল পৌরবাসীর বুকের ওপর এক জগদ্দল পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে। আমি এ কাল্পনিক বিলের বিরোধিতা ও তার চরম প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সালেক বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার পানির বিলের অসংগতির ব্যাপারটি আমাদের কাছে একাধিক পৌরবাসী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌসকে অবহিত করলে তিনি বলেন আগামী ১৫ আগষ্টের পূর্বেই মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন মহলের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পৌর নাগরিকদের পানির বিল সহনশীল মাত্রায় রেখে নির্ধারণ করা হবে।