মানিকগঞ্জে কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে শ্রমিক দলের কমিটি গঠনের অভিযোগ
13, July, 2021, 8:29:45:PM
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : কাউকে না জানিয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শ্রমিক দলের পকেট কমিটি গঠন করেছেন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া। দলের দুঃসময়ে আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের পরামর্শ নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক।
কমিটি গঠন করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলেও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়নি। তবে জেলার বিভিন্ন নেতা-কর্মীর মাধ্যমে কেন্দ্র বিষয়টি অবগত হয়েছে। অগঠনতান্ত্রিকভাবে গঠিত এই কমিটিকে বিলুপ্ত করা হবে বলে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই আব্দুল কাদের মিয়াকে সভাপতি ও মাসুদ রানাকে সাধরাণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের দিকে সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানাসহ ১৯ জন নেতা-কর্মী শ্রমিক দিবসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ২০১৭ সালে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। এরপর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। কমিটির মেয়াদদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে কাদের মিয়া গোপনে আওয়ামীলীগে যোগদানকৃত সদস্যদের নিয়ে পুনরায় ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ পকেট কমেটি গঠন করে। ফলে কমেটির ৩১ জন নেতা-কর্মী পদত্যাগ করেন।
২০১৯ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যনির্বাহী সভায় ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভূক্ত জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন/পুনঃগঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটি গঠনে প্রতিটি জেলার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সমন্বয় কমিটিকে ২০ জুন ২০১৯ তারিখের মধ্যে কমিটি গঠনের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠান। কিন্তু একবছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি আবারও শ্রমিক দলের কমেটি অনুমোদনের জন্য কার্যকারী সভাপতিকে চিঠি প্রদান করেন। এর মধ্যে মহামারি করোনাভাইরাস সবকিছু উলট পালট করে দেয়। ফলে স্থগিত হয়ে যায় সেই কার্যক্রম।
এরই মধ্যে গত বুধবার হঠাৎ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা শ্রমিক দলের একটি কমিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়। সেখানে দেখা যায় ব্যাকডেটে (১ এপ্রিল ২০২১) কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু এতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমেটির সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক লিটন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজা মিয়া বলেন, এই কমিটির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আব্দুর রাজ্জাক লিটন নামে শ্রমিক দলে কোন সাধারণ সম্পাদক নেই। ২০১৪ সালে দেয়া কমিটিতে মাসুদ রানা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগ করেন। তবে লিটন শ্রমিক দলের কোন কমিটিতে ছিলেন না। তিনি মাংসের ব্যবসা করতেন। এলাকায় লিটন কসাই নামে পরিচিত।
জানতে চাইলে আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবিরের সম্মতি নিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা কমিটির মিটিং ডেকে রেজুলেশন করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৬০ থেকে ৬২ জন নেতাকর্মী স্বাক্ষর নিয়ে করেছেন। জেলা শ্রমিক দলের দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক ও একজন যুগ্ম সম্পাদক মিথ্যা অপপ্রচার করছেন বলে দাবি করেন আব্দুল কাদের মিয়া।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এস এ কবির জিন্নাহ বলেন, গত ০১/০৪/২১ ইং তারিখের সদর উপজেলা শাখার শ্রমিকদলের পুর্নাঙ্গ কমিটির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
মানিকগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে জেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীর মাধ্যমে আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি। কেন্দ্রের কাউন্সিলের নির্দেশে সকল কমিটির কার্যক্রম স্থগিত। তাই এটা অ-রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং বিতর্কিত কমিটি। এ বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শ্রমিকদলের কার্যকরী সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, মানিকগঞ্জ জেলার শ্রমিকদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর কাছ থেকে সদর থানা কমিটির বিষয়ে শুনেছি। তবে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন কমিটি গঠন ও পুরাতন কমিটি ভাঙ্গা যাবে না। সে হিসেবে মানিকগঞ্জ সদর থানা কমিটি অবৈধভাবে গঠন করা হয়েছে । এ কমিটি গ্রহনযোগ্য নয়।