চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিনব কৌশলে প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ করেছে একটি প্রতারক চক্র। আর প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা দিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছে প্রতারক চক্রের সব সদস্যরা। সম্প্রতি ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর প্রতারণার সব তথ্য ফাঁস হয়েছে। প্রতারক চক্রের এক নারী সদস্যের অডিও রেকডিংয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণার সত্যতা মিলেছে। ভুক্তভোগিদের দাবী- প্রতারণার টাকায় রেজাউল ইসলাম রেজা আজ কোটিপতি। প্রতারক রেজা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চর মোহনপুর দক্ষিণপাড়ার মৃত নৈয়মুদ্দিন মাস্টারের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ প্রতারক চক্রের নিয়ন্ত্রক। তিনি বর্তমানে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড নিউমার্কেট শাখায় কর্মরত। প্রতারণায় অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী একজন উপ সচিব। এ প্রতারক চক্রের আরেক নিয়ন্ত্রকের নাম রেজাউল ইসলাম (রেজা)। তার আপন ভাই পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। রেজার আরেক সহযোগী কাবিরও এ চক্রের সদস্য। প্রতারক চক্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারী সদস্যও রয়েছেন। রেজাউল এবং ওই ব্যাংক কর্মকর্তার অন্যতম নারী সহযোগীর নাম বিউটি। এছাড়াও কুষ্টিয়া এ চক্রের আরেক নারী সদস্য রয়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্য বিউটির ভাষ্যমতে কুষ্টিয়ায় তাদের যে সদস্য রয়েছেন তিনি হলেন, পুলিশের উপ-পরিদর্শক। জানা গেছে, সংঘবদ্ধ এ চক্র কৌশলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২ কোটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন দিশেহারা একাধিক পরিবার। প্রায় দুই বছর ধরে বিভিন্ন প্রলোভনে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত এদের প্রতারণার জাল। প্রতারণার বাণিজ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত থাকার পাশাপাশি এনজিও কর্মী, বিদেশী দাতা সংস্থার প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়সহ নানা পরিচয় ব্যবহার করেছেন তারা। প্রতারণার শিকার মাত্র একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার অনেকেই লোকলজ্জা, কেউ বাড়তি ঝামেলার জন্য নীরব আছেন।
মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বর্স্ব হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১০ পরিবার। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সহজ-সরল মানুষের প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ভুক্তভোগীদের রাতারাতি ধনী হওয়ার স্বপ্নকে পুঁজি করে প্রতারণা করে চক্রটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটি, নতুনহাট, চর মোহনপুর ও টিকরামপুর এলাকার ১০টি পরিবার জমানো টাকা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। কয়েকটি পরিবার আবার ধারদেনা করেও চক্রটিকে টাকা দিয়েছে। এ চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে নিরক্ষর, অসচেতন মানুষ তাদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা হারিয়েছেন। প্রায় ৩০ জন এ চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। মামলা হওয়ার পর প্রতারক চক্রের প্রধান আসামী রেজাউল ইসলামকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপার্দ করে সদর মডেল থানা পুলিশ। তবে বাদীর সঙ্গে সমন্বয় করে মিমাংসার শর্তে জামিন নেন তিনি। তবে জামিন নেয়ার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মিমাংসার কোন উদ্যোগ নেননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মিমাংসার উদ্যোগ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এ প্রতারক সিন্ডিকেট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তদন্তাধিন মামলাটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহীনি সদস্যরা বলছেন, এ প্রতারকরা খুবই চতুর। এরা নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এদের বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাবে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়। এদের খপ্পর থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
মামলার আইনজীবী শফিক এনায়েতুল্লাহ বলেন, প্রতারকরা পার পেয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করেই প্রতারণা করে। ফলে আদালতে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত ছাড়া এসব মামলার আসামিদের শনাক্ত করা কঠিন। পুলিশ চাইলে এ মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই মো. ফজলু জানান, এ মামলা প্রধান অভিযুক্ত বিউটি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্তাধীন বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না।