ক্রীড়া ডেস্ক : দুই লেগে দাপুটে ফুটবল প্রদর্শনী করল ইংল্যান্ডের জায়ান্ট ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। যার সুবাদে ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো মিলেছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের টিকিট।
বুধবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠ থেকে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে ম্যানসিটি। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে হাসতে হাসতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছল ম্যান সিটি। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ পিএসজি।
অন্যদিকে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে। বুধবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে গোলশূন্য ড্র করেই টুর্নামেন্টের সেরা চারে পৌঁছে গেছে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
মূলত প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জেতার পরই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছিল রিয়ালের সেমির টিকিট। ২০১৫-১৬ মৌসুমের পর প্রথমবার ইউরোপ সেরার মঞ্চে নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হলো রিয়াল।
পুরো ম্যাচজুড়েই ছিল লিভারপুলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের দাপট। একইসঙ্গে ছিল তাদের আক্রমণভাগের ফিনিশিং ব্যর্থতা। সারা ম্যাচে অন্তত ১৫টি শট করে তারা, যার মধ্যে মাত্র ৪টি ছিল লক্ষ্য বরাবর। কিন্তু সবগুলোই দারুণ দক্ষতায় ফেরান রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া।
অন্যদিকে দুই গোলের লিড থাকা রিয়াল মাদ্রিদ শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা সাজিয়ে এগুতে থাকে। তাদের দৃঢ় রক্ষণ ভেদ করা সম্ভব হয়নি লিভারপুলের পক্ষে। তবে আচমকা কিছু সুযোগ তৈরি করে রিয়ালও। কিন্তু সেগুলোয় গোল আর হয়নি।
ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত লিভারপুল। সাদিও মানের কাছ থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পান মোহামেদ সালাহ। সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। পা দিয়ে তার শট ঠেকিয়ে দেন থিবো কোর্তোয়া।
একাদশ মিনিটে আবার সুযোগ আসে স্বাগতিকদের সামনে। এবার জেমস মিলনারের ক্রসবার ঘেঁষে আসা শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ব্যর্থ করে দেন রিয়াল গোলরক্ষক।
লিভারপুলের আক্রমণের ঝাপটা সামলে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নেয় রিয়াল। ম্যাচের গতি কমিয়ে রাখার দিকেই ছিল তাদের মনোযোগ। ২০তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল দলটি। করিম বেনজেমার শট তুরস্কের ডিফেন্ডার ওজান কাবাকের পা ছুঁয়ে দিক পাল্টে পোস্টে লেগে ফেরে।
ফিনিশিংয়ে ব্যর্থতায় প্রথমার্ধে জালের দেখা পায়নি লিভারপুরল। ৪০তম মিনিটে খুব ভালো জায়গা থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সালাহ। পরের মিনিটে খুব কাছ থেকে উড়িয়ে মেরে সুযোগ হাতছাড়া করেন জর্জিনিয়ো ভেইনালডাম।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ সুযোগ পেয়ে যায় লিভারপুল। কিন্তু রবের্তো ফিরমিনো ও ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের ব্যর্থতায় কর্তোয়ার পরীক্ষাই নিতে পারেনি স্বাগতিকরা।
আক্রমণাত্মক ফুটবলে রিয়ালকে চেপে ধরে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু রক্ষণ জমাট করে প্রতি আক্রমণের কৌশল নেয় সফরকারীরা। ৬৬তম মিনিটে প্রায় এগিয়েই যাচ্ছিল তারা। অনেকটা এগিয়ে ভিনিসিউস জুনিয়রের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার পর বেনজেমাকেও হতাশ করেন লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন।
ফলে ড্র হয় দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি। প্রথম লেগে পাওয়া ৩-১ গোলের জয়ের সুবাদেই সেমিতে উঠে গেছে রিয়াল। সেরা চারের লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ পোর্তোকে হারিয়ে সেমিতে ওঠা চেলসি।
অপরদিকে ম্যানচেস্টার সিটির সেমিফাইনালে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা নেন ফিল ফোডেন। দুই লেগেই ডর্টমুন্ডের জালে বল জড়ান তরুণ এই ইলিংশ ফরোয়ার্ড। ঘরের মাঠে প্রথম লেগেও তার গোলে জিতেছিল ম্যানসিটি।
অ্যাওয়ে ম্যাচে গোলের সুবিধা থাকায় এদিন ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতলেই শেষ চারের টিকিট হাতে পেত ডর্টমুন্ড। ম্যাচের শুরুতে জুড বেলিংহ্যামের গোলে এগিয়ে গিয়ে আশা জাগিয়েছিল জার্মান ক্লাবটি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। প্রথমার্ধে ১-০ এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যানচেস্টার সিটিকে সমতায় ফেরান রিয়াদ মাহরেজ। সমতা টানার পর সফরকারীদের জয়সূচক গোলটি করেন ফোডেন।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম আক্রমণে এগিয়ে যায় ডর্টমুন্ড। ডি-বক্সে আর্লিং হলান্ডের পাস একজনের পায়ে লেগে বেলিংহ্যামের সামনে। দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের এই মিড-ফিল্ডার ডান পায়ের জোরাল শট ম্যানসিটির গোলরক্ষক এদেরসনকে পরাস্ত করে। ৫৫ মিনিটে স্পট-কিক থেকে ম্যানসিটিকে সমতা ফেরান মাহরেজ। ১৪ ম্যাচ পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের দেখা পেলেন আলজেরিয়ার মিড-ফিল্ডার।
৭৪তম মিনিটে অনেকটা দূর থেকে ডে ব্রুইনের নেওয়া শট ঠেকান গোলরক্ষক। পরের মিনিটেই দলকে এগিয়ে নেন ফোডেন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার শট পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। শেষ পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রেখে পরের রাউন্ডে ওঠার উল্লাসে মাঠ ছাড়ে সিটি।