বুধবার, ২৪ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   উপসম্পাদকীয়
  দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে পর্যটন শিল্প হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার
  9, December, 2020, 9:55:24:AM

যেদিন থেকে বুঝতে শিখি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। সেদিন থেকে সবচেয়ে বেশি যে বাক্যের সাথে পরিচয় ঘটে তা হলো -সুজলা, সুফলা,চিরসবুজ  আমাদের এই বাংলাদেশ।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশ যেখানে নদ, নদী, ফুল,ফল, পাখি,  পাহাড়, খাল বিলে পরিপূর্ণ। সেদিন থেকেই বুঝতে পারি এই দেশই পারে ভ্রমণ পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে।

তখন থেকে কেন জানি হাইস্কুল না মাড়াতেই মাথায় চেপে বসে কিভাবে এই দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এবং সবার সামনে মেলে ধরা যায় এদেশের সকল রূপ বৈচিত্র্য। তাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সুযোগটা পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টায় হয়ে ওঠে প্রথম পছন্দ।

তবে আশেপাশ থেকে শুরু হয় প্রশ্ন ছুড়াছুড়ি- এটা আবার কি বিষয়। কেন পড়বে এই বিষয়ে? এই বিষয়ের ভবিষ্যত কোথায়?

সেদিন আমি জোর দিয়ে বলতে পারিনি কেন পর্যটনের উপর আমার এত আগ্রহ। সবাইকে বলতে পারাটা যদিও সহজ ছিলো তবে এর অবস্থান বোঝাতে পারাটা মোটেও সহজ ছিলো না। আমাদের পর্যটন শিল্পের উপর অপার সম্ভাবনা থাকলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়েও ব্যার্থ হয়েছি কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে।  

বর্তমানে  মানুষের পর্যটনের প্রতি বিশেষ চাহিদা লক্ষণীয়। বেশ কয়েক বছর ধরে হালাল পর্যটন, বিনোদন পর্যটন, রিলিজিয়াস পর্যটন, ব্যাবসায় পর্যটন, চিকিৎসা পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে দেশ বিদেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে ছুটে চলেছে উচ্চবিত্ত পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। উক্ত বছরে কোভিড ১৯ এর জন্য যখন সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় তখন রীতিমতো পর্যটন কেন্দ্র ঝুঁকিতে পড়ে যায়। আশ্চর্য বিষয় হলো লকডাউন ছেড়ে দেওয়ার পরপরই কোভিড ১৯ এর তোয়াক্কা না করেই ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে।
 
দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে যেমন সাজেক ভ্যালী, কক্সবাজার, কুয়াকাটা সহ বিভিন্ন ভ্রমণ স্পটে মানুষের ভীড় জমলেও তা অন্যান্য বছরের ন্যায় যথেষ্ট কম। কোভিড ১৯ এর ফলে যখন সব মানুষ গৃহবন্দি ঠিক ঐ মুহুর্তে প্রকৃত যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করোনার এর সময়ে  প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার যে বিশাল ক্ষতি হয় ট্যুরিজম খাতে। এই বিশাল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুধু সরকার নয় বরং গোটা দেশের মানুষকে নজর দিতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।   

পর্যটন এর মত সম্ভবনাময় এই খাতের দিকে আমরা বরাবরই সঠিক পরিচর্যার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছি। অনেকাংশেই এই খাতে পিছিয়ে আছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায়।

পর্যটন খাতে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ এই খাতে নেই পর্যাপ্ত দক্ষ মানবসম্পদ ব্যাবস্থাপনা, নেই উক্ত বিষয়ের প্রতি সঠিক গবেষণা, পরিকল্পনা প্রণয়ণে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এই খাতের উন্নয়নে ব্যাংক লোন পাওয়া দুষ্কর।
 
এছাড়াও পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য সর্বপ্রথম যেদিকে নজর দেওয়া প্রয়েজন তা হলো উন্নতমানের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা। এত বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভ্রমণের কথা মাথায় আসলে কেউ মেয়ে হিসাবে ঝুঁকি আছে বলে বাঁধা  দেবে না।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে তবে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যতদূর সম্ভব খারাপ প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় অস্থিতিশীল রাজনীতি, হরতাল, বন্যা, খরা এসকল প্রচারণা  করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না করে বরং দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং হাজার বছরের পুরানো ঐতিহ্য এর রূপ তুলে ধরতে হবে। বাঙালির আতিথেয়তার ঘাটতি ছিলো না কখনো। আর এই অতিথিপরায়ণতার জন্য এদেশের মানুষেরা বরাবরই ছিলো জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের এখন যে ১৭ টা এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) অর্জন করতে হবে তার ৮,১২,ও ১৪ সরাসরি পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত। তাই যতদ্রুত সম্ভব এই বিষয় মাথায় রেখে পর্যটন খাতের ঘাটতি গুলো খতিয়ে দেখতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে পর্যটন খাতকে টেকসই উন্নয়নে অন্তভুর্ক্ত করতে।

এই খাতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা প্রদান করে মজবুত অর্থনীতির খুঁটি স্বরুপ দাড় করাতে হবে। জেলা ভিত্তিক পুরস্কার এর ঘোষণা দিতে হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিচর্চা ও পরিবর্ধন এর জন্য। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে পর্যটন শিল্পের ভাবমূর্তি।

এই বিষয়ে শিক্ষারত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের থেকে বিভিন্ন আইডিয়া,বা  মতামত  সংগ্রহ করতে হবে যা আধুনিকতার সাথে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। দেশের সামগ্রিক পরিকল্পনা বা মেগা প্রজেক্ট এর পরিকল্পনা যাতে এই শিল্প খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেদিকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।  

পর্যটন খাতের উপর যারা শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে জ্ঞান অর্জন করছে এমন দক্ষ জনশক্তির নিয়োগ ঘটাতে হবে। হাতে কলমে প্রতিক্ষণের মাধ্যমে পর্যটন এর  জনশক্তিকে আরো মজবুত করে তুলতে হবে। পর্যটনের সাথে সম্পৃক্ত সকল জনশক্তির মধ্যে সু -সম্পর্ক গড়ে তুলে সবাইকে চেইন অব কমান্ড এর মধ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷

দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক গোষ্ঠীকে প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী মনোভাব পোষণ করতে হবে। সর্বোপরি পর্যটন এর মহাপরিকল্পনা সমূহ বাস্তবায়নে দেশের সকল নাগরিককে সততার পরিচয় দিতে হবে। সব স্তর থেকে এই শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে।

লক্ষ্য রাখতে হবে বাড়ির পাশের প্রকৃতিক সৌন্দর্যের উপর। আজ যা অবহেলিত কাল তা হতে পারে পর্যটনের অনেক বড় কেন্দ্র। তাই দেশের সমস্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিচর্চা করতে হবে। প্রকৃতি দুই হাত ভরে দিয়েছে আমাদের সৌন্দর্যের ছোঁয়া যার যত্ন নেওয়া আমাদের কর্তব্য। পদ্মবিলের পদ্মফুল হোক বা কাঁশবনের কাঁশফুল সবকিছুকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্থির চিত্র ধারণের আনন্দে দুই হাতে এসব সৌন্দর্য নষ্ট করা হতে বিরত থাকতে হবে। সবাই সচেতন হলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠবে প্রধান হাতিয়ার।

 

আঁখি খানম
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি  ম্যানেজমেন্ট।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল, বাংলাদেশ।


   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     উপসম্পাদকীয়
শৃঙ্খলার নিগূঢ় থেকে মুক্তিই প্রত্যাশা
.............................................................................................
প্রসঙ্গ স্বশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী
.............................................................................................
অপার সম্ভাবনাময় নদীপথকে যেকোন মূল্যে বাঁচাতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশে রেলপথ বিকাশের ইতিহাস
.............................................................................................
কেন বাংলা টাইপিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না
.............................................................................................
আত্মহত্যা উদ্বেগ করণীয়
.............................................................................................
বিপণনের অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন কৃষিখাত
.............................................................................................
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: তৃণমূল পর্যায়ে সুদের বিস্তৃতি
.............................................................................................
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের দায়িত্বশীলতা দরকার
.............................................................................................
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা
.............................................................................................
পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব বনাম সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার দ্বন্দ্ব
.............................................................................................
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় জেল হত্যা ও গ্রেনেড হামলা
.............................................................................................
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক
.............................................................................................
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব
.............................................................................................
জিপিএ ফাইভ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বিসিএসের নামই কি সফলতা!
.............................................................................................
আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্প
.............................................................................................
কেন ভর্তি হবেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে
.............................................................................................
বাংলাদেশ ও জ্বালানি তেল
.............................................................................................
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
.............................................................................................
চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও মানবাধিকার প্রদান করতে হবে
.............................................................................................
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রজন্মে প্রজন্মের যাত্রা
.............................................................................................
২১ আগস্ট ১৫ আগস্টেরই ধারাবাহিকতা
.............................................................................................
পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে: নেপথ্যে কারণ...
.............................................................................................
ভয়াবহ একটি দিবস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
.............................................................................................
১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস : বাংলাদেশ উন্নত বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর যুবকেরা
.............................................................................................
বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং প্রয়োজন সন্তানের ভালোবাসার
.............................................................................................
শত বাঁধা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে জবি
.............................................................................................
নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
.............................................................................................
গৌরব, আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
.............................................................................................
আত্মহত্যাকে না বলি জীবনকে উপভোগ করতে শিখি
.............................................................................................
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকায় জীবন
.............................................................................................
আপোষহীন আবুল মাল মুহিত
.............................................................................................
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’
.............................................................................................
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
.............................................................................................
জগন্নাথের গর্ব ভাষা শহীদ রফিক
.............................................................................................
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং সম্ভাব্য প্রস্তুতি
.............................................................................................
দেশকে এগিয়ে নিতে ছিন্নমূল পথশিশুদের পুনর্বাসন করতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ একটি অপরটির পরিপূরক
.............................................................................................
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বশর্ত স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন
.............................................................................................
ইউপি নির্বাচন : দলীয় প্রতীক তৃণমূলে দলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
.............................................................................................
টিকটক এবং সামাজিক অবক্ষয়
.............................................................................................
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প
.............................................................................................
করোনায় বেকারদের অবস্থা শোচনীয়
.............................................................................................
অবক্ষয়ের নতুন ফাঁদ ‌টিকটক
.............................................................................................
রাষ্ট্র, আইন এবং রোজিনারা
.............................................................................................
পথশিশুরাও মানুষ
.............................................................................................
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন
.............................................................................................
নির্ভীক পদচারণার ৫০ বছর
.............................................................................................
সর্বত্র জয় হোক বাংলা ভাষার
.............................................................................................
বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT