মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাকলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আসলেই কি মানুষ সমাজে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের মত ভুমিকা পালন করছে?
বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। আজ আমাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের প্রভাবে কলুষিত হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। দিনে দিনে সুস্থ সমাজটা অসুস্থ সমাজে পরিণত হচ্ছে। চারদিকে শুধু খুন-খারাবি, চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, মাদকের অবাধ ব্যবহার, পর্নোগ্রাফির প্রভাব আর ধর্ষণ।
একশ্রেণির তরুণ সমাজ মাদকের নেশায় ডুবে ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পর্নোগ্রাফির প্রভাবে ধর্ষণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা এসবের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও প্রেমের নামে নোংরামি করে তার ভিডিও নেটে ছাড়ছে। এসব না হয় বাদই দিলাম।
বর্তমান প্রেক্ষাপটের কথাই তুলে ধরি, কভিড ১৯ এর প্রভাবে কিভাবে সামাজিক অবক্ষয় দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ হাজারো মানুষ কর্মহীন হয়ে হতাশায় মাদকের নেশায় ডুবে সব ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে। এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও মাস্ক, স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে অসাধু ব্যাবসায়ীরা। রিজেন্ট ও জেকেজি হাসপাতালের করোনা টেস্ট প্রতারণার ঘটনা তো সবারই জানা।
করোনা ভাইরাসের অযুহাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিসর্জন দিচ্ছে কিছু মানুষ। এর উদাহরণ বৃদ্ধ মাকে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে ফেলে যাচ্ছে তারই সন্তানেরা, স্ত্রী স্বামীকে এবং স্বামী স্ত্রীকে রেখে পালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত পরিবারকে সহযোগিতার পরিবর্তে একঘরে করে দিচ্ছে সমাজের মানুষজনরা। এরকম ঘটনা চোখের সামনে অহরহ ঘটছে।
আগেকার দিনে তো এসব ছিল না কারণ তখন ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার ছিল না, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় ছিল এবং মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনে ছিল। কিন্তু এখন তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি।
আমরা হয়ত ভাবি, আদৌ কি সচেতন হয়ে সমাজ থেকে সামাজিক অবক্ষয় নির্মুল করা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব তবে হয়তো পুরোপুরি নির্মুল সম্ভব নয়। তবে অনেকাংশে নির্মুল সম্ভব। এতেই আমরা সুস্থ সমাজ ফিরে পাব।
সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে পারিবারিক বন্ধন জোরদারের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবককে সন্তানের বিষয়ে আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
হালিমা সাদিয়া নোহা তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।