বিশ্ব আজ থমকে গেছে করোনা ভাইরাসের ভয়াল তান্ডবে। বাতাস ভারী হয়ে গেছে লাশের গন্ধে। পৃথিবীর আজ বড্ড অসুখ। সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাত মানব জাতি আজ বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছে করোনা নামক এই অদৃশ্যে শত্রুর কাছে। পূর্বাভাস ছাড়াই যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে সারা বিশ্ব।
বিজ্ঞান অসহায় হয়ে পড়েছে চোখেও দেখা যায় এতো ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়তো এটাই। ভাইরাসের সাথে মানুষের যুদ্ধ অতপর, মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি। পৃথিবীর সকল স্বাভাবিক নিয়মের পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর মানুষের আজ বেহাল দশা, পথে ঘাটে পড়ে থাকছে লাশ, ভয়ে আতঙ্কে কেউ এগিয়ে আসতেও যেনো নারাজ। নিষ্ঠুর এই ভাইরাসটা এসেছেই যেনো, মানুষের উপর এক নির্মম প্রতিশোধ নিতে।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়েছিল এই অদৃশ্যে শত্রুর ভয়াল তান্ডব। এক এক করে ইতালি, স্পেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরান, সৌদি আরব, ভারত, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে তার অস্তিত্বের জানান দিয়েছে। করোনার এই তান্ডব শেষে বিশ্বের কি পরিমাণ ক্ষতি হবে বা কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে, সে সম্পর্কে আমরা এখনো অবগত নয়।
ইতোপূর্বে, ১৭২০ সালে প্লেগে ১ লাখ, ১৮২০ সালে কলেরায় ১ লাখ, ১৯১৮-২০ তে স্প্যানিশ ফ্লুতে ১০ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। কাকতালীয় ভাবেই, দীর্ঘ ১০০ বছর পর আবার পৃথিবীর বুকে হানা দিয়েছে করোনা বা পড়ারফ-১৯ নামক মহামারী। করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসলেই ভাইরাসটি অন্যের মাঝে তার অস্তিত্বের জানান দেওয়ার সুযোগ পায়। চীন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও বিশ্বের অন্যান্যা রাষ্ট্রের অবস্থা ভয়াবহ এবং দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে।
বিশ্ব আজ রুপ নিয়েছে এক ভয়াল মৃত্যুপুরীতে। এখন পর্যন্ত, কোন ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করাও সম্ভব হয়নি এই ভাইরাসটির। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এই রাষ্ট্রগুলো আজ পরাস্ত হয়ে, আতœসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে করোনার কাছে।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ৮ মার্চ করোনা তার অস্তিত্বের জানান দেয়। দিন দিন সংখ্যাটা যেনো গণহারে বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১লাখ ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। করোনা নিয়ে সারাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮০০ এর ও অধিক এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ও কিন্ত করোনায় মৃত্যুর থেকেও বেশি। এখন প্রতিদিনই ৪০০০ এর কাছাকাছি শনাক্ত আর ৪০ এর ঘরে মৃত্যুর হার লক্ষণীয়। সারাদেশব্যাপী, আরো ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই, নিয়ন্ত্রণের জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই মুহূর্তে, আমাদের দায়িত্বশীল, সুনাগরিকের পরিচয় দিতে হবে। এই তান্ডব থেকে বাঁচতে হলে, আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। এবারের যুদ্ধ থেকে নিজে, পরিবার এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে হবে। মনে রাখতে হবে করোনায়, জনসচেতনতাই বড় প্রতিষেধক। তাই এই মুহূর্তে ঘরে থাকায় সর্বোৎকৃষ্ট কাজ।
এখন, মানুষের সংস্পর্শে আসা মানেই, নিজের জীবনকে বিপন্ন করা, পরিবারের সদস্যদের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া এবং এই মহামারীকে দেশব্যাপী গণহারে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করা। অসচেতন থেকে নিজের ক্ষতি করা এবং অন্যকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া যেমন কোন সচেতন নাগরিকের গুণ নয়, তেমনি কোন সঠিক মুসলিমের গুণ ও নয়।
আর রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও, ঘরে অবস্থান না করে মানুষের মাঝে যাওয়াতো ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে হত্যার মতোই অপরাধ। তাই এই মুহূর্তে, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মহানবী (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, আর মহামারীর এলাকা থেকে পলায়ন একই বিষয়। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা যেমন হারাম তেমনি মহামারীর সময় এলাকা ছাড়াও হারাম।
মহানবী (সা.) বলেন, “যে কোনো ব্যক্তি মহামারীর সময় নিজেকে ঘরে রুদ্ধ রাখবে ধৈর্য সহকারে, সওয়াবের আশায় এবং এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখেছেন এর বাইরে কিছুই ঘটবে না, সে শহীদের মর্যাদা ও বিনিময় লাভ করবে।”
আপনার বেপরোয়া চলাফেরার কারণে যদি অন্য কেউ আপনার দ্বারা সংক্রমিত হয়, তাহলে এর দায়িত্ব কে নেবে? এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আপনি বান্দার হক নষ্টকারী হবেন। তাই এই মুহূর্তে আমদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। তাই বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে বের হওয়া থেকে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকুন। জরুরী প্রয়োজনে বাহিরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহির যাাবেন। এছাড়াও ঘন ঘন সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড, ভালোভাবে হাত ধৌত করুন। হাঁচি কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন। নাকে মুখে, চোখে হাত দিবেন না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এরকম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
করোনাকালীন বিত্তশালীরা মানবিকতার পরিচয় দিন আপনার আশেপাশের গরিব, অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিন। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে, কেউ যেন ক্ষুধার অভাবে মারা না যায়, অথবা কারো যেন খাবারের জন্য এই মুহূর্তে ঘর থেকে বের হতে না হয়, সেই জন্য সরকারের পাশাপাশি সকল বিত্তবান মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশেকে এই মহামারীর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হলে, সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সরকারকেও এই মুহূর্তে কিছু জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে সকল জায়গা বেশি ছড়িয়ে পড়েছে সেসকল জায়গা লকডাউন কার্যকর করতে হবে। ডাক্তারদের যথাযথ, সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যতো বেশি সম্ভব পরীক্ষা করাতে হবে। আক্রান্তদের পুরোপুরি আলাদা করে যথাযথ চিকিৎসা, সেবা প্রদান করতে হবে। গরীব অসহায় জনগণের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তাদের ঘরে খাবার পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের যেন যথাযথ বন্টন হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে পৃথিবী সুস্থের জন্য দোয়া করতে হবে। কোন এক ভোরে পৃথিবী থেকে করোনা বিদায় নিবে। পৃথিবী আবার সুস্থ হবে, সেই সাথে সুস্থ হবে প্রিয় স্বদেশ। তাই আসুন এই মুহূর্তে ঘরে থাকি নিরাপদ থাকি, মাতৃভূমিকে নিরাপদ রাখি।
লেখক;- মোঃ হাসানুর রহমান শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
|