মহামারী করোনায় গোটা বিশ্ব আজ নিস্তব্ধ। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লকডাউন চলছে দেশে দেশে। তবুও এর লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রাণসংহারক ক্ষুদ্র অণুজীবের তান্ডব থামাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে সমগ্র বিশ্ব। ঠিক তখনই করোনা মেকাবেলায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গণমাধ্যম। উহানের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেঙে তথ্য বের করে এনেছে বিশ্ববাসীর কাছে। চিন থেকে শুরু করে সর্বত্র রাষ্ট্র যখন তথ্য গোপনের চেষ্টায় ব্যস্ত, তখনই গর্জে উঠেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। নিজেদের দায়িত্বে অবিচল থেকে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সংবাদ সংগ্রহ করছেন তারা। সচেতনতার প্রসার ঘটিয়ে নীরবে বাঁচিয়ে চলেছে বহু মানুষের প্রাণ।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। থেমে নেই মৃত্যুর ঘন্টাও। যা দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনকও বটে। কিন্তু এই ভাইরাসটি যে শুধু ক্ষতিই করেছে তা নয়, বরং আমাদেরকে অনেক শিক্ষাও দিয়েছে। স্মরণ করিয়ে দিয়েছে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব। বুঝিয়ে দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য-খাত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা। এবং সর্বোপরি আরও একবার প্রমাণ করেছে গণমাধ্যমের উপযোগিতা।
সংক্রামক যেকোনো রোগের বিস্তার ঠেকাতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে৷ কারণ সঠিক তথ্যটি দ্রুত মানুষের কাছে পৌছানোটা অত্যন্ত জরুরি৷ মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গুজব প্রতিরোধ করে জনসাধারণকে সচেতন ও সতর্ক করতে গণমাধ্যমকর্মীরা দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশন করেন। ফলে জনগণ বিভ্রান্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। একবার ভাবুন তো, এই মহামারীর সময় যদি গণমাধ্যম না থাকত, তবে বাড়ির ড্রয়িং-রুমে বসে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে আদৌ কি জানা সম্ভব হতো? গণমাধ্যমের অনুপস্থিতিতে সরকারকে যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে লকডাউন তথা সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব বোঝাতে হত, তাহলে এতদিনে করোনার ভয়াবহ তান্ডব ঠেকানো কতটুকু সম্ভব ছিলো?
একটা সময়ে দেশে কলেরা বা ডায়রিয়ায় মানুষের মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক ঘটনা৷ কিন্তু সহজ, স্বল্পমূল্যের সমাধান ওরস্যালাইনের কথা এখন দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষটিরও জানা। নাগরিকদের সচেতন করার মাধ্যমে পোলিও, পক্স ও প্লেগসহ বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঠেকানো গেছে বাংলাদেশে৷ এক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না৷
‘বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন’ গণমাধ্যম এই বার্তা যদি আমাদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে না দিত, তাহলে হয়তো এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করতো। তখন হয়তো হাজার চেষ্টাতেও দেশজুড়ে সর্বাত্মক লকডাউন সম্ভব হত না। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কোথায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে, লকডাউনের জেরে কার ঘরে হাঁড়ি জ্বলছে না, এসব খবর থেকে শুরু করে, করোনার বিরুদ্ধে যারা সামনে থেকে লড়াই করছেন তাঁদের কুর্ণিশ জানানো পর্যন্ত, সর্বত্রই জনসাধারণের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় কাজ করে চলেছে গণমাধ্যম।
লকডাউন চলাকালীন কোথায় অনিয়ম হচ্ছে, কোথায় মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানছে না এসব তথ্যও কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমের দৌলতেই কমছে মানুষের দুর্ভোগ, সচেতনতার প্রচারের মাধ্যমে বাড়ছে সামাজিক দূরত্ব ও বেঁচে যাচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ।
করোনার ছোবল বিশ্বের কোনো দেশ এবং কোনো জনগোষ্ঠীকেই যেহেতু ছাড় দেয়নি, সেহেতু গণমাধ্যমকর্মীরাও আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষ জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় কার্যকরী সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এই গণমাধ্যম। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুপাতে নিরাপত্তা বঞ্ছিত হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এজন্য সরকারের গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর জোরদার প্রয়োজন।
মুতাছিম বিল্লাহ রিয়াদ শিক্ষার্থী: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া