লাইফস্টাইল ডেস্ক : পৃথিবীতে সন্তানকে নিয়ে যারা সব চেয়ে বেশি চিন্তা করেন, তারা হলেন বাবা-মা। বাবা-মার এ চিন্তা লেগে থাকে কীভাবে তার শিশুর মেধা ও বিকাশ বৃদ্ধি হবে। শিশুর কিছু নিয়মিত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে থাকে। তবে এটাও ঠিক, সব খাবারে একই পুষ্টিগুণ থাকে না, এমন কিছু খাবার আছে যার মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।
যা শিশুর মস্তিষ্ক সক্রিয় ও সতেজ রাখে। মস্তিষ্ক সক্রিয় এবং সতেজ থাকলে শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। যেহেতু শিশুদের বেড়ে ওঠায় কিছু খাবার অনেক বেশি ভূমিকা রাখে; সেহেতু আমাদের মনে রাখতে হবে সেই খাবারগুলো শিশুদের যাতে বেশি করে দেয়া যায়।
এ বিষয়ও দেখতে হবে যে ছোট বাচ্চাদের পাকস্থলি ছোট থাকে তাই তাদের পেট অল্পতেই ভরে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অল্প পরিমাণ খাদ্য দিয়ে কীভাবে বেশি করে পুষ্টি দিতে পারেন। পনির প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি দুধজাতীয় খাবার। এতে আছে প্রচুর আমিষ এবং ক্যালসিয়াম, যা সুস্থ হাড় ও দাঁতের জন্য আবশ্যক।
একই সঙ্গে পনির মুখের ভেতর যে অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী, সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সুতরাং এ খাবার শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্ক মানবদেহের অন্যান্য অংশের বিকাশ ও সঠিক পরিচালনা অনেকাংশেই নির্ভর করে। শিশুকালেই এ অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির উপযুক্ত বিকাশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জেনে নেই মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে সন্তানকে কোন খাবারগুলো খেতে দেয়া বেশি দরকার।
ডিম : শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশসাধন হয় উল্লেখযোগ্য হারে। এসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি পুষ্টি হচ্ছে কোলাইন। মস্তিষ্কের গভীরে স্মৃতিকোষ তৈরি করতে কোলাইনের প্রয়োজন রয়েছে। ডিমের কুসুমে পর্যাপ্ত কোলাইন পাওয়া যায়। আট বছর পর্যন্ত প্রতিদিন যতটুকু কোলাইন লাগে তার প্রায় সমপরিমাণ পুষ্টি একটি ডিমের কুসুম সরবরাহ করতে পারে। ডিমে প্রচুর প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এ ও ফোলেটও রয়েছে- এদের প্রত্যেকটিই কোষের বৃদ্ধি, বিকাশসাধন ও মেরামতে দরকার। তাই শিশু ডিমের প্রতি অ্যালার্জিক না হলে তাদেরকে প্রতিদিন ডিম খেতে উৎসাহিত করুন।
তৈলাক্ত মাছ : তৈলাক্ত মাছ অনেক উপকার করতে পারে। মস্তিষ্কের বিকাশসাধন ও স্বাস্থ্যের জন্য ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ মাছ খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কোষের বিকাশসাধনের জন্য অন্যতম বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এ পুষ্টি নিউরোট্রান্সমিটার ফাংশনে ভূমিকা রেখে আচরণগত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কিছু গবেষণায় নিম্নমাত্রার ওমেগা ৩ এর সাথে কম মেধার যোগসূত্র দেখা গেছে এবং অন্যদিকে ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্টেশনে মেমোরি ফাংশন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
হোল গ্রেন : শিশুদের সকালের নাস্তায় হোল গ্রেন (গোটা শস্য) রাখা উচিত। কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ এই খাবার মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে গ্লুকোজ ও এনার্জির যোগান দেয়। এতে প্রচুর বি ভিটামিনও থাকে, যা নার্ভাস সিস্টেমকে সুস্থ ও পুষ্ট রাখে। অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে, হোল গ্রেনের ব্রেকফাস্ট শর্ট-টার্ম মেমোরি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে। অন্যদিকে সকালের নাশতা হিসেবে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে এমন লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়নি। হোলগ্রেনে উচ্চ পরিমাণে ফাইবারও রয়েছে, যা শরীরে গ্লুকোজ সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করে।
বিনস : শিমের বিচির মতো বিচি প্রকৃতির খাবারে (বিনস) উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। পিন্টো ও কিডনি বিনসে ওমেগা ৩ ফ্যাট বেশি থাকে, যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও কার্যক্রমের জন্য দরকারী। শিশুদের বিনস খাইয়ে স্কুলে পাঠালে ক্লাশরুমে মন বসবে। এছাড়া এসব খাবার তাদেরকে দীর্ঘসময় সতেজ রাখবে।
দুধ : দুধ, দই ও পনির এতটা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যে শিশুর ডায়েটে চোখ বন্ধ করে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। দুধ জাতীয় খাবারের প্রোটিন, বি ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি মস্তিষ্কের টিস্যু, নিউরোট্রান্সমিটার ও এনজাইমের গ্রোথের জন্য প্রয়োজনীয়। এসবকিছু মস্তিষ্কের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আরেকটি উপকারিতা হচ্ছে, এসব খাবার ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ বলে এগুলো খেলে দাঁত ও হাড় মজবুত হবে তথা সুস্থ থাকবে। শিশুদের বয়স অনুসারে বিভিন্ন মাত্রার ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হতে পারে। আপনার শিশুকে দুই থেকে তিন ধরনের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে চেষ্টা করুন।