বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এতদিন আমরা এটাই জেনে এসেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে সরকার গর্ব করত, গর্ব ছিল আমাদেরও। ওই সময়ে সরকার চাল রপ্তানির চিন্তা-ভাবনাও করেছিল। কিন্তু গত বছর থেকে উল্টো সংবাদ আমরা শুনতে পেলাম। সরকার চাল আমদানি করতে যাচ্ছে। আর এবার আরও স্পষ্ট হলো বিষয়টি। দেশে যে কোনো সময়ে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কায় সরকার চাল আমদানি শুরু করেছে। অবাক ব্যাপার যে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি করেও চালের উচ্চমূল্য ঠেকানো যাচ্ছে না। দেশের উত্তরাঞ্চলে চলছে বন্যা। বন্যার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কমাচ্ছে না। চালের কেজি যে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে, সেই উচ্চমূল্য থেকে আর কমছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, চাল আমদানি শুরু হলে চালের দাম প্রতি কেজি ৬ টাকা করে কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, চালের দাম কমেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এর কারণ কী? চাল আমদানির প্রভাব বাজারে পড়ছে না কেন? এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কৃষকের ধানের দাম যাতে কমে না যায় সে বিষয়টি বিবেচনা করে অতিরিক্ত চাল আমদানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমদানি করতে হবে, করেন। কিন্তু অতিরিক্ত আমদানি করবেন না। কৃষকের ধানের দামের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। অতিরিক্ত আমদানি করলে কৃষকের ধানের দাম পড়ে যাবে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষকের যাতে সমস্যা না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমদানি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যথার্থ। এরই মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের একাধিক চালান বাংলাদেশে এসেছে। দেশ যাতে খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য সরকার বেশ সচেতন। হাওরে অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতি এবং সরকারি গুদামের মজুদ কমে আসার প্রেক্ষাপটে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দেয়ায় সরকারকে আরও চাল আমদানি করতে হচ্ছে। দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত, এটা সত্য। এই সময়ে দেশে যাতে খাদ্যসংকট দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। তবে আর যাই হোক এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক সংবাদ নয়। উল্লেখ্য, গত মার্চের শেষ দিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের ছয় জেলার ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়। ওই সময় থেকেই বাড়ছে চালের দাম। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতনির্ভর বাঙালি যদি চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে কিংবা কিনতে হয় উচ্চমূল্যেথ তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী? আমাদের কথা হচ্ছে, চাল যদি আমদানি করতে হয়, তা হলে দামও কমাতে হবে। বন্ধ করতে হবে ব্যবসায়ীদের কারসাজি। করতে হবে কৃষক স্বার্থ সংরক্ষণ। কারণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়লে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারের কার্যকর ও পরিকল্পিত পদক্ষেপই কেবল পারে খাদ্যোৎপাদন আগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে।