শিশু ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা সমাজে উদ্বেগ জনক হারে বেড়ে গিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেমন শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে তেমনি অবলীলায় নির্যাতন ধর্ষণ সহিংসতা ও হত্যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও থেমে নেই। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে কিছুকিছু মানুষ শিশুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এই নিপীড়নকারীরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শিশুদের ধর্ষণ ও হত্যা পর্যন্ত করছে। আবার নির্যাতনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আপলোড করা হচ্ছে।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় তিন বছরের শিশু তানহাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত শিপন। এরপর তিনি লাশটি তানহাদের ভাড়া বাড়ির শৌচাগারে ফেলে যান। সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন এসব তথ্য জানান। এর চেয়ে বর্বর ঘটনা আর কী হতে পারে?
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত চার বছরে ১২ হাজার ৮৫টি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল ২১ হাজার ২২০টি। যা আগের বছরের তুলনায়ও বেশি। এটা নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক ঘটনা। চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যার একাধিক ঘটনার পর কয়েকটি মামলায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেও থামছে না নির্যাতন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। দেশের শিশু নির্যাতন ও হত্যা রোধে কঠোর আইন থাকা এবং দায়ীদের শাস্তি হওয়া সত্ত্বেও নির্যাতন বন্ধ না হওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের ব্যাপার। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে দেশের কোমলমতি শিশুরা। মানুষ কতটা বর্বর হলে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করতে পারে তা আমাদের মাথায় ধরে না। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির। ইদানীং মানুষের লোভ আক্রোশ নিষ্ঠুরতা ও জিঘাংসা অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। যার নিষ্ঠুর শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। বেশির ভাগ সময়ে তাদের অপহরণের পর কিংবা পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। অভাব হাহাকার হতাশায় বাবা-মাও নিজের সন্তানকে হত্যা করছেন অবলীলায়। এ ছাড়া সামান্য অপরাধে শিশুকে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এটা অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজেরই এক ভয়াবহ চিত্র। এই চিত্র বদলানো জরুরি।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা ও খুলনায় রাকিবকে নৃশংস নির্যাতনের মধ্যদিয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়। নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ হয়। এরপর থেকে সারা দেশের শিশু নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসতে থাকে। শিশু অধিকার সংরক্ষণ করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা, তার বিকাশের ক্ষেত্রেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা একেবারে কম নয়।
দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অপার সম্ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে যে শিশুর নিরাপদে বেড়ে ওঠার কথা সে কেন অপহরণ ধর্ষণ ও নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হবে? এর জন্য কি কেবল ব্যক্তি দায়ী? শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজ ও রাষ্ট্রের কি কোনো ভূমিকা নেই? আমরা শিপনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ এ ধরনের ঘটনার দ্রুত অবসান চাই। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সামাজিক সুস্থতার জন্যও বিষয়টি জরুরি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।